Monday 30 January 2017

প্রচ্ছদ নিবন্ধ – ১
...........................................................................................................................
বিষধর
সন্দীপ কুমার মন্ডল

অঘ্রাণে এক 'মুঠ' ধানের শীষে বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে নবান্ন গন্ধ, গোলায় ভরে যায় রাশি রাশি স্বপ্ন। অথচ আমাকে ছুঁয়ে থাকে নাবালক কুয়াশা। রোমকূপ জড়িয়ে ধরে হিমানী, প্রিয়তমার মত চুমু খায়। বিষ্ময়ে দেখেছি সর্ষের হলুদ মাঠে ছড়িয়ে পড়ছে নবজাতক শীতকাল। ওই শীতকাল আমার নয়, স্বপ্ন আমার নয়। প্রেমাস্পদের মতো অজ্ঞাতেই আপন হয়ে উঠছে এই শীতকাল। দূর্বলচিত্তের মানুষেরা অতি সহজেই মেনে নিতে পারে। মেরুদণ্ডহীন সাপের ফণাকে অনেকেই সাপুড়ের ইশারায় নাচ ভেবে আনন্দ পায়, নয়তো শীতকালকে মেনে নেবার কোনো অভিপ্রায় আমার ছিল না।
 পর পর কয়েকটা প্যারাসিটামল জানে ছাতিম গন্ধে আমার জ্বর আসে হু হু করে। ভেলিয়াম টেন-এর মত বিফল কেউই বুঝবে আসল বিফলতার অর্থ। আমি বোঝাতে আসি না এখন ছাতিম কেন লাক্ষারঙ, এখন কাশফুল কেন তার কেশর ফেলে ফুটিয়ে তুলেছে কঙ্কাল। তবু শিরায় শিরায় মেডিকেটেড ড্রাগের অহংকারী দৌড় তো থামে না। এরা কেউ বোঝে না একটা বার্ষিক আবর্তনে ছ-ছ'বার বদলে যায় ঋতু, বোঝে না দক্ষিণায়নে রোদ বড় মিঠে হয়। আমি পিঠে রোদ পেতে বসি।
শীতঘুমে যাবার আগে শেষবারের মত মেখে নিচ্ছি রোদ। আমার অহংকারের কিরীটটিকে কেন্দ্র করে গুটিয়ে নিতে হবে নিজেকে, খুঁজে নিতে হবে গোপন কোনো আস্তানা। বিষোদ্গারণ আসলে একটা ক্ষয়, নির্বিষতার দিকে এগিয়ে যাওয়া। বিষোদ্গারণ আসলে একটা অহংকার। এই শীতকে মেনে নিলে শীতঘুমের ভবিতব্য কখন যেন প্রার্থিত শীতঘুম হয়ে যায়। এই তো শীতকাল... সেই আকাঙ্ক্ষিত শীতকাল... আমার তিনমাস ঘুমিয়ে থাকার শীতকাল।
অথচ ঘুম আসে না... কিছুতেই না....কিছু স্বীকারোক্তি বাকি রয়ে গেছে এখনও...
প্রচ্ছদ নিবন্ধ -২ 
...........................................................................................................................
শীতলস্মৃতি
অনিন্দিতা মণ্ডল
 যারা দক্ষিণ বঙ্গের এই জনাকীর্ণ শহরের অলিতে গলিতে প্রথম নিঃশ্বাস নিয়েছি , এবং হয়ত শেষ নিঃশ্বাস ও নেবো , তাদের কাছে শীত একটা উৎসব । না , শহরে প্রথম তুষারপাত জাতীয় ঘটনা ঘটেনা বটে , তবে যেটুকু শীত আসে তা আমরা উদযাপন করি ষোল আনা । কতই বা নামে পারদ ? দশের নীচে তো নয়ই , অধুনা তাও হয়না । বসন্তের আমেজ মাখানো একটা শীত শীত ভাব । কি কষ্ট কি কষ্ট ! তোরঙ্গ দেরাজ থেকে রঙবেরঙের শীতপোশাক , মাফলার টুপি বের করা হয়না । দশবছর আগে মাসতুতো দিদির শ্বাশুড়ী যে দারুণ সাদা ধবধবে কার্ডিগানটা বুনে দিয়েছিলেন, এবছর তার সঙ্গে ম্যাচ করে একটা শিফন কিনেছিলাম । সঙ্গে মুক্তোর গয়না । শীতের বিয়েবাড়ির আগাম ফ্যাশান । সে গুড়ে বালি । এ তো রীতিমত গরম ! কার্ডিগান পরে কে ? তবুও অভ্যাসের ফলে ছাতে যাই । দিনের প্রথম নরম রোদ্দুর বের হলেই বাক্স টেনে ছাতে এনে ফেলি । ডালা খুলে দিই । ভেতর থেকে উঁকি দেয় আমার আদুরে শীতবস্ত্র । অবিশ্যি বাই ল আমি এখন এক মফস্বলের বাসিন্দে । কলকাতা থেকে পঁচিশ কিলোমিটার দূরে গঙ্গাতীরবর্তী এক মফস্বল । এখানে বসত ঘন হলেও কলকাতার মত বাড়েনি । নানা অসুবিধেতে জীবনযাত্রা আর সরল হয়না । ফলে এখান থেকেই মানুষের ঢল নামে দেশের সব শহরে । এখানে অপেক্ষাকৃত ভাবে শীত তাই প্রবল । কলকাতার মতন ঘাম প্যাচপ্যাচে শীত নয় মোটেই । কালীপুজোর পরপরই আমরা গায়ে দেবার জন্য বিছানায় কাঁথা রাখি । আর সত্যি সত্যি শীত টের পাই অঘ্রানের নবান্নের ঘ্রাণে । নবান্নের দিন সকালে ঠাকুরদালান থেকে প্রসাদ বয়ে এনে দেয় সুখোদা । কাঁচা দুধ , নতুন গুড় , কড়াইশুঁটি, গোবিন্দভোগ চাল , মূলো , আদা , কমলালেবু , আপেল , বেদানা , কিশমিশ দিয়ে তৈরি আমাদের নিজস্ব ফ্রুট ডেজার্ট । কি অপরূপ স্বাদ আর সুবাস ! বিশবছর আগে আমার শ্বাশুড়ীমা , আমি ভালোবাসতুম বলে বিশেষ করে , বাড়িতে নিজের হাতে আমাকে তৈরি করে দিতেন এই ডেজার্ট । প্রসাদ তো কণিকামাত্র । এখন অবশ্য প্রসাদেই কুলিয়ে যায় । কারণ ও বস্তুটির স্বর্গীয় আস্বাদ গ্রহণে পরিবারের বাকি সদস্যরা অসমর্থ । আর দ্বিতীয় যে কারণ তা হলো এমন শীত আর পড়েনা নবান্নে যে শীতসুবাসিত নলেন গুড় ডেজার্ট এর স্বাদ বাড়াবে ।
      তখন তখন আমরা শীতকালে ছাত থেকে মোটেই নামতে চাইতুম না । রুটিনটা মোটামুটি এরকম ছিল - সকালে কাঁপতে কাঁপতে লেপের তলা থেকে উঠে বসে গায়ে সোয়েটার চাদর জড়ানো । ( আহা ! সাদা মোটা সুতির মশারীও তখন কত আরামদায়ক ছিল !) তারপর সাহস সঞ্চয় করে বিছানার বাইরে আসা । মুখ ধোবার জলে হাত ঠেকানো মাত্র তড়িত্ চমক । গরম চায়ের মত এমন অমৃত আর ছিলনা । জীবনদায়ী । ঘরের জানলা দিয়ে সামনে গঙ্গার দিকে তাকালে কেবল এপারের ঘাটটা দেখা যেত । সাদা কুয়াশার চাদরে ঢাকা গঙ্গার ওপার একেবারেই দৃষ্টির বাইরে । মনে হত যেন সাগরপার । আর গঙ্গার রং ও শীতে সাগরঘেঁষা । হালকা নীল ও ধূসরের মাঝামাঝি । জলের কাজকর্ম সেরে রান্নাঘরের দিকে ছুটতাম সকলে । আগুন পোহানোর স্নিগ্ধতার কি কোনও তুলনা হয় ? আর বেলা একটু গড়ালেই বাগান নয়ত ছাত আমাদের বৈঠকখানা । গান, গল্প,  লুডো খেলা , শুকনো কাপড় ভাঁজ করা , কমলালেবু খাওয়া , রোদ্দুরে দেওয়া লেপ কম্বল উল্টোনো , উলবোনা , - যেন নিত্যদিনের বনভোজন । ঠিক তিনটের পর রোদ্দুর ফিকে হতে শুরু করলেই ছাতজোড়া সংসার গুটোতে হত । আস্তে আস্তে নেমে আসতাম আমরা । কিন্তু সন্ধ্যে হলেই আমরা বিছানাআশ্রিত হয়ে পড়তাম । রাতের খাবার গরম করে পরিবেশন করা যেন ফাঁসির সাজার থেকেও বেশি দণ্ড মনে হত । তবু শীত চাইতাম আমরা । আমাদের এবাড়ির পাথরের মেঝেতে , গঙ্গামাটির গাঁথনির ত্রিশ ইঞ্চির দেওয়ালে শীত ঠাকুরানী বনেদী বাড়ির ঠাকুরঝির মত রয়ে যেতেন আরও কিছুকাল । সবচেয়ে মারাত্মক শীত পড়ত পৌষে । সংক্রান্তিতে । সাগরের এলোমেলো মরারোদের হাওয়া খড়খড়ি নড়িয়ে , ঘুলঘুলি দিয়ে , শার্সির ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়ত শোবার ঘরের বিছানায় । রোদের অভাবে ঠান্ডা লেপের মধ্যে ওম তৈরি হতনা । হি হি করে কাঁপতুম সকলে । তবে এর চেয়েও কঠিন ছিল পৌষের লক্ষ্মীপূজোর দিন । কাকভোরে লক্ষ্মী পাতা নিয়ম । ভোরবেলার সেই স্নান যে কি বিভীষিকা ছিল ! তবে সারাদিন বেশ ঝরঝরে হয়ে থাকতাম সেদিন । এখন আর তেমন শীত পড়েনা । আর শীতের কষ্ট পোহাতে হয়না । বাড়ির লোকজন অবশ্য বলে উচ্চরক্তচাপহেতু আমি শীত বোধ করি কম ।
        বহু আগে , চল্লিশ বছর তো হবেই , কলকাতা শহরেও কিঞ্চিদধিক শীত পড়ত । খেলে ফেরবার সময়ে দেখতাম ফুটপাতে জড় হয়ে গরীব গুর্বো মানুষ আগুন পোহাচ্ছেন । তখন শীত মানে দুপুরের ময়দান । শীত মানে চিড়িয়াখানা । শীত মানে নাহুমের কেক । শীত মানে বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলন । শীত মানে দিদির জন্মদিন । শীত মানে আমার জন্মদিন । এর সাথে শীত আমাদের জন্য আরও একটু বাড়তি আনন্দ বয়ে আনত । আমাদের মামারবাড়ি ছিল বিহারে । ছোটনাগপুরের এক অল্পখ্যাত রেলওয়ে জংশন , চক্রধরপুর । পাঁচ মামার মধ্যে দুই মামা রেলের চাকরিতে এখানেই পোস্টেড ছিলেন সারাজীবন । বড়মামার কোয়ার্টার বেশ লোভনীয় হলেও আমরা ঘাঁটি গাড়তাম ন’ মামার বাসাবাড়িতে । কারণ দিদিমা ওখানেই থাকেন । বেশির ভাগ রাতের গাড়িতেই আমরা যেতাম মামার বাড়ি ।                        
ভোর রাত্রে ট্রেন নামিয়ে দিত স্টেশনে । ঘুম জড়ানো চোখে ঠান্ডায় জমতে জমতে আমরা রিকশা চেপে যেতাম প্রেম নিবাসে । মামার বাড়ির পোশাকী নাম । তখনও অন্ধকার আকাশে । রিকশার হর্ণ শুনতে পেয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে মামা এসে জাফরীর দরজা খুলে দাঁড়াত । আমরা ওই আধঘুমের মধ্যেই যথেষ্ট স্নেহ আদর সঞ্চয় করে ঢুকে পড়তাম লেপের তলায় । মায়িমা , মাসি , দিদিমার সদ্য ছেড়ে যাওয়া ওম্ ধরা লেপের তলায় । আবার ঘুমিয়ে পড়তাম আরামে । সকালে ঘুমচোখ খুলে নিজেরই বিশ্বাস হতোনা যে সত্যি সত্যি পৌঁছে গেছি মামার বাড়ি । সূর্য উঠলেই কিন্তু দারুণ উপভোগ্য হয়ে উঠত জায়গাটা । আমরা বাড়ির সামনের লম্বা ফালি ঘাসজমিতে খেলাধুলো করতাম । সামনে দিয়েই চলে গেছে চাইবাসা রোড । যার ডানদিকে চাইবাসা আর বাঁদিকে এতোয়ারি বাজার । ছোটবেলায় ওই রাস্তা , ওই গন্তব্য যেন কি রহস্যময় লাগত । ভিড়ে ঠাসা বাস দেখে মনে হত কোন সুদূরের যাত্রী এরা ! মামার বাড়ির পাশেই গায়ে গায়ে ছিল সরকার জেঠুদের বাড়ি । জেঠুর ছিল শিকারের নেশা । জেঠুর জিপে চড়ে এই শীতকালেই তো আমরা যেতাম টেবোপাহাড়ে । সেসব দিন শিকার করতনা জেঠু । জঙ্গলে জঙ্গলে ধুলো মেখে ঘুরে বেড়ানোই তখন আনন্দ ছিল আমাদের । একবার ফেরবার সময়ে জিপের পেছনে একদম ধারে বসেছি । জিপ ছুটছে । পিচরাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কেমন ঘোর লেগে গেলো । গাড়ি থেকে একটু ঝুঁকে গেলাম আর ছিটকে পড়ে গেলাম । ঠোঁট কেটে গেলো । কেমন করে যেন ছোটবেলায় হাজার চোট পেলেও হাতপা ভাঙতনা । সেভাবে কেটেকুটেও যেতনা । ফেরবার পর দিদিমা বললেন - আর জঙ্গলে যেতে হবেনা । এই অবেলায় সারাদেহ ধুলোয় রাঙা করে ফিরলেন সব । দিদিমা খাঁটি সর্ষের তেল ঘষে ঘষে মাখিয়ে দিতেন গায়ে । চান করে সে কি আরাম ! অমন গন্ড গাঁয়ে কি করে আর নাহুমের কেক পাওয়া যাবে ! অগত্যা মামা একবার ওপরে বালি নীচে বালির খোলা করে উনুনের আঁচে কেক বানালো । কি যে স্বাদ তার ! আজও ভুলিনি । সেবছর পয়লা জানুয়ারি আমরা মামার বাড়িতে । দিদির জন্মদিন । সব পাঁচ সাতের খোকা খুকু আমরা । সকালবেলা মামা ভাবছে মাংস ভাত রান্না হবে আজ । মুশকিল হলো দিদিমা বামুনের ঘরের বিধবা । রাঁধবেন বাড়বেন কিন্তু অবেলায় স্নানও করবেন । হঠাত্ খেলতে খেলতে দেখি স্টেশনের দিক থেকে যে রাস্তাটা এসে মিশেছে চাইবাসা রোডে , তার মুখে বাবা দাঁড়িয়ে । রাস্তা পেরোলেই আমাদের হাতের নাগালে চলে আসবে । বাবার হাতে ঝুলছে দড়িবাঁধা একটা বাঁধাকপি । সবাই অবাক ! দিদি হতাশ । নাকিসুরে মাকে বলছে - ওঁমা দেঁখোনা ! বাবা কিঁ এনেছে । মা বিরক্ত । এই ভবঘুরে অসংসারী মানুষটাকে আর মানুষ করা গেলোনা । বাঁধাকপি ঝুলিয়ে এই ডবল উৎসবে কেউ শ্বশুরবাড়ি আসে । দিদির জন্মদিন আর নতুন বছর একসাথে । বাবা ততক্ষণে নাগালে চলে এসেছে । রহস্যময় হেসে মামার হাতে বাঁধাকপিটা দিতেই মামা একটু ঝুঁকে পড়ল । ওজনটা বুঝতে পারেনি মামা । অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল - এত ভারী কেন গো ? বাবা বলল - ওটা কেক । বাবির জন্মদিন তো আজ ! সব্বাই খুউব অবাক । এই বাঁধাকপি কপি নয় ? কেক ? সেই নাহুমের ? খুব মজা হলো সেদিন । মায়েরও মুখটা আলোকিত হয়ে উঠেছিল ।                       
 আজ কিছুকাল হলো পৌষ আমার কাছে তেমন সুখস্মৃতি বয়ে আনেনা । এরকমই এক পৌষের শীতে গিয়েছিলাম মামার বাড়ি । সেবছর ডিসেম্বরের একুশে চলে গেলেন দিদিমা । মামার বাড়ির সব মায়া যেন একাই নিয়ে চলে গেলেন । আর তারও পর , এরকমই এক তীব্র শীতের রাতে , পৌষের শেষে চলে গেলেন শ্বশুরমশাই । তাঁর শীতের ব্যবহারের নানান সরঞ্জাম পড়ে রইল খাট জুড়ে , ঘর জুড়ে , আর আমাদের চেতনা জুড়ে । আর এইতো সেদিন ! দার্জিলিং পাহাড়ে শেষ ডিসেম্বরের সোনাঝরা রোদ্দুরে শ্বেতাম্বর কাঞ্চনজঙ্ঘাকে ঐশ্বরিক মহিমায় অনুভব করছি , হঠাত্ জানতে পারলাম জন্মদাতা চলে গেলেন ওই উচ্চতম শৃঙ্গেরও ওপরে । সেদিন ওই মহিমময়ের উপস্থিতিও আমার শোককে এতটুকু ঘোচাতে পারেনি । বয়স যত বাড়তে থাকছে পৌষমাস আর শীতকাল ততই মৃত্যুর তীব্রতা বহন করে আনছে । শীতের সুখময় স্মৃতি দ্রুত অপসৃয়মান । এখন তাই উষ্ণতা টুকুই চাই । আপনজনের , প্রিয়জনের সান্নিধ্যে , আলিঙ্গনের নিরাপত্তাজনিত উষ্ণতা । মৃত্যুর মতন হিমশীতল শীত আর চাইনা ।
প্রচ্ছদ নিবন্ধ – ৩
...........................................................................................................................
শীত – একটা নস্টালজিয়ার কঙ্কাল
স্পন্দন চট্টোপাধ্যায়
মোটামুটি প্রতিবছরই এই নভেম্বরের শেষ দিকটা থেকে তল্পিতল্পা, বাক্স-প্যাঁটরা নিয়ে দোরগোড়ায় এসে হাজির হয় আহাম্মকটা। যেতে যেতে তার সেই ফেব্রুয়ারীর মাঝখান পার করে তিনকাল গড়িয়ে এককালে ঠেকে প্রায়। আর, সে এত বড়ই নির্বোধ, বোঝেও না যে, এই বিশ্বায়নের অসীমে, দুর্বার সুপারসনিক গতির ঝিকমিক চুমকি বসানো জীবনে, ঐ আলস্য আর বেড়ালের মত চুপটি করে আরামে চোখ বুজে শুয়ে থেকে পিঠে রোদ পুহিয়ে নেওয়া স্রেফ আর চলেনা। তোমরা, প্রতিটি মনুষ্যশিশুই, পৃথিবীতে জন্মেছ, জন্মাচ্ছ আর জন্মাবেও শুধুমাত্রই ছোটার জন্য। হ্যাঁ ঠিক আছে, এক্কেবারে প্রথম যে-কটা বছর হামা দিচ্ছ, হাঁটতে শেখোনি, সে সময়টুকু ক্ষমা-ঘেন্না করে দেওয়া যাবে’খন, কিন্তু একবার হাঁটতে শিখে গেলে আর থামা নয় ভাই। হাঁটো হাঁটো... হ্যাঁ ঠিক আছে, স্পিড বাড়াও এবার... চলো আর একটু জোরে... আরও জোরে... চলো ভাই ছোটো... ফাস্ট ফাস্ট... থামবে না। এই তুমি কে ভাই বসলে? জিরোবে পরে। আসল কথা হল, জিরোবেই না। একদম সেই ইহজগতের মায়া-ফায়া ত্যাগ করলে তবে বিশ্রাম। তার আগে আবার রেস্ট কি? মোটামুটি এইটে হল গিয়ে ছকটা। মানে ওপর থেকে জীবনের একখানা স্যাটেলাইট ভিউ নিলে এটাই দাঁড়াবে।
তা মোটামুটি এটাই হল যেখানে ব্লু-প্রিন্ট, সেখানে যে-কোন মানুষ, মনুষ্যেতর প্রাণী, জড়পদার্থ, অভ্যেস যাই আলস্য নিয়ে আসুক না কেন, সে আহাম্মক ছাড়া কি! আর শুধু আহাম্মকই নয়। জাত শত্তুর। দেখবেন, শীতকাল পছন্দও করে কারা? অলসরাই কিন্তু। বিছানাটাকেই মোটামুটি আইসল্যান্ড বানিয়ে লেপটাকে ইগলু বানিয়ে ফেলে তার মধ্যেই বসবাস যাদের। যদিও বা বেরোনো, সেও সোয়েটার, জ্যাকেট, গ্লাভস, টুপির বর্ম সমেত। আর একটু কবিতা-টবিতা লেখার আঁতলামি থাকলে, কিম্বা ফালতু গল্পের বই-টই পড়ে সময় নষ্ট করার বদভ্যেস থাকলে তো কথাই নেই। ওদের চেয়ে ভালো শীতকে আর কে বাসে! বিছানায় লেপ জড়িয়ে বসে গরম কফিতে চুমুক দিয়ে দাড়ি চুলকোতে চুলকোতে কিম্বা মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে গুরুগম্ভীর তত্ত্ব কপচানো আর কবিতার লাইন আওড়ানো। আর এক রকমের প্রাণীও আছে বটে যারা শীতকাল ভালোবাসে। যদিও তারাও বেশ বিলুপ্তপ্রায় এখনই। মেঘ না-ডাকা পর্যন্ত গোসাপের কামড়ে পড়ে থাকার মত সেই আদ্যিকালের বনেদিয়ানার গায়ে এখনও এঁটুলির মত লেগে থাকা কিছু সাবেকি জয়েন্ট ফ্যামিলি। কিছু সোঁদা শ্যাওলা গন্ধের পুরোনো আমলের লোক। বিষ পুরো এগুলো। পলেস্তারা খসে খসে পড়ে যাচ্ছে, বটের শেকড়-ফেকড় ছড়িয়ে গিয়ে দেওয়াল হেলিয়ে দিচ্ছে, তবু সে বাড়িতেই থাকবে। দুপুরবেলা বারান্দায় রোদে বসে গায়ে ভালো করে তেল মাখবে, গা-হাত-পা ডলবে, খেয়েদেয়ে সবাই মিলে ছাদে উঠবে, তারপর মাদুর পেতে বসে কমলালেবুর খোসা ছাড়িয়ে রোদ পোহাতে পোহাতে সবাই গুলতানি মারতে মারতে লেবু খাবে। সে যেন শ্রীকৃষ্ণের দেওয়া কমলালেবু। কোয়া আর শেষই হয়না। ছ্যাঃ। এভাবে কেউ সময় নষ্ট করে!
হ্যাঁ মশাই, সময় নষ্টই। তা ছাড়া আর কি! সব সময় নেগেটিভ দিকটাই দেখবেন না তো বিশ্বায়নের। আমাদের এই গ্লোবালাইজেশানের শিক্ষাটাই হল, চোখের সামনে যা কিছু আছে সেটাকেই পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করো। আর সময়ের মত এমন নিরবিচ্ছিন্ন কাঁচামাল কি আছে এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে? কাজেই, সময়টাকে বিশ্বায়নের মিক্সিতে ফেলে তাকে ছেকড়ে ঘেঁটে নাড়িয়ে ছিঁড়ে পিষে নিয়ে নির্যাস্টুকু বের করে মুনাফা করে নাও যতটা পারো। যতক্ষণ নিঃশ্বাস আছে। আর, মুনাফা মানে কিন্তু তোমাদের জ্ঞানজ্ঞম্যি, চোখে চশমা আঁটা মণ-মণ ওজনের ভারী ভারী দর্শন নয়, ভাইরা। মুনাফা মানে একটাই। জিডিপি। ফোর্বস লিস্ট। বছরে কত প্যাকেজ। ইটালিয়ান মার্বেল। আর কিছু না। আর কিচ্ছু হতে পারেনা। আর এই তামাম উন্নত মানসিকতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হল আলিস্যি, যেটা বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, কড়াইশুঁটি, বেগুন, পাটালি গুড়, জয়নগরের মোয়ার মতই শীতের একখানা বাইপ্রোডাক্ট।
কাজেই, শত্তুরের সাথে যা করা উচিৎ, আমরা, এই মুক্ত বাজার অর্থনীতিও, তাই করেছি শীতের সঙ্গে। তবে খুব আস্তে আস্তে। স্লো-পয়জনিং। যাতে সেভাবে কেউ টের না-পায়। এরম করতে করতে একদিন কমলালেবুর খোসা ছাড়িয়ে খেতে খেতে শেষ কোয়াটায় গিয়ে পৌঁছে হঠাৎ মুখটা তুলে দেখবেন, মাল হাপিস। স্রেফ ‘নেই’ করে দিয়েছি শীত বলে কনসেপ্টটা। এখনই অনেকটা করা হয়ে গেছে। আজ থেকে পাঁচ-দশ বছর আগেও যতটা জাঁকিয়ে পড়ত ও-জিনিষ, এখন আর পড়ে? হুঁ হুঁ বাওয়া, তরতর করে দশ-কুড়ি-পঞ্চাশ-একশো-দেড়শো তলার সাঁ-সাঁ সব বুর্জ খলিফা উঠে যাচ্ছে, শিল্পায়ন হচ্ছে, বড় বড় কারখানা বসছে জঙ্গল পুড়িয়ে, এক সেকেন্ডের একশো কোটি ভাগের মধ্যে তোমার মেসেজ আমস্টারডাম থেকে আদিসপ্তগ্রাম চলে যাচ্ছে...  অত তাড়াতাড়ি বোধহয় একটা গোটা আর্টপেপার সাইজের পৃথিবীর ম্যাপের ওপর আমস্টারডাম্‌ টু আদিসপ্তগ্রাম আঁকও কাটা যায়না। তা, তার জন্য একটুখানি শীত আপোষ করা যাবে না?
তথ্য বলছে, গত দশ বছরে শীত প্রায় হাফ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গেছে আমাদের পৃথিবীতে। ২০০০ থেকে ২০১০, এই দশকটা পৃথিবীর ইতিহাসে উষ্ণতম দশক বলে চিহ্নিত হয়েছে, কেননা, এই দশ বছরের মধ্যেই এখনও পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসের উষ্ণতম আটটা বছর রয়েছে। সৌজন্যে, এই ভূপৃষ্ঠের ওপর হেঁটে চলে বেড়ানো সর্বশ্রেষ্ঠ জাত।
অথচ, শীত কিন্তু কারও বাড়া ভাতে ছাই দেয়নি। সে খানিক স্লথ গতির একাকী অভিমানী বৃদ্ধের মতই পড়ে আসা বিকেলের আলোয় পার্কের বেঞ্চিতে বসে থাকে প্রতিবছর। তারপর সময় ফুরিয়ে এলে সব গুছিয়ে নিয়ে চলে যায়। সে তো দেখেছে, কিভাবে তারই পাশের বেঞ্চিতে একসময় এসে বসত হেমন্ত। ক্রমে ক্রমে সেও উঠে গেছে অনেকদিন হল। এখন আর আসেনা। কিম্বা আসলেও বোঝা যায় না তেমন। একটা ঠান্ডা চাহনির ওয়ার্নিং তাই সব সময়েই রয়েছে শীতের দিকে।
কাজেই শীতকাল নিয়ে ঐ চাদরে চলকে পড়া চায়ের দাগের মত একটু নস্টালজিয়া আর স্মৃতিরোমন্থনই শুধু পড়ে আছে এখন। সেই যে অনেকবছর আগে কবীর সুমন বর্ষার গান বাঁধতে গিয়ে লিখেছিলেন, ‘এসো, করো স্নান নবধারাজলে বলবে কে আর? / রিয়েল এস্টেট শোনে কি কখনও মেঘমল্লার?’ আসলে শীতের অবস্থাও কতকটা তেমনই হয়েছে এখন। কেউ শোনেনা। রিয়েল এস্টেট, শিল্পায়ন, মাধ্যাকর্ষণ ছাড়িয়ে মঙ্গল-শনি-প্লুটো হাঁটকে প্রাণ খোঁজা, দুরন্ত ইন্টারনেট, বুর্জ-খলিফা, স্মার্টফোন, সেন্ট্রাল এসি, প্রফেশানালিজ্‌ম্‌, খোলা বাজার... কেউ না। কেউ ছাদে বসে রুটি বেগুনভাজা খায়না, কমলালেবু খায়না, পাটিসাপটার জন্য বায়না করেনা, গড়চুমুকে পরিযায়ী দেখতে যায়না, রান্নাঘরে বসে মা-কে কড়াইশুঁটির খোসা ছাড়িয়ে দেয়না, পাটালি গুড়ের গন্ধে পাগল হয়না, সবাই মিলে পিকনিক করেনা, বান্ধবীর সাথে চিড়িয়াখানা যায়না, যাদুঘর ঘোরেনা... কিচ্ছু করেনা।
শীতকে আসলে আমরা মূল্যায়নই করতে পারিনি ঠিক করে। শীত একটা ঋতু তো বটেই, তবে তারও ওপরে, সে একটা বোধ নিয়ে আসে। যে বোধ বলে, শুধু ছোটাছুটিই নয় গোটা জীবনটা। খানিক থিতু হয়ে বসে জগতের নির্যাস টুকু নেওয়াও জীবনের বড় আংশ একটা। আর, আরও একটা যে বড় শিক্ষা দিয়ে যায় শীত, তা হল, পুরোনোকে নতুন আসার আনন্দে স্বচ্ছন্দে যেতে দেওয়ার শিক্ষা। আমরা, এই মনুষ্য জাতিটা অনুধাবনই করতে পারলাম না, শুধু যাওয়া আসা আর শুধু স্রোতে ভাসা নিয়ে যে জীবনটা, সেখানে এমন একখানা চ্যাপ্টার এত সহজে পড়িয়ে দেওয়ার জন্য শীতের মত শিক্ষক আর কে আছে!
#শীত_শীত_কবিতা
..............................................................................................................................
বনবীথি পাল পাত্রের লেখা শীত শীত কবিতা -----
এসে গেল শীত গুটিগুটি পায়ে উত্তুরে হাওয়া সাথে ,
বাঙালী মাতবে পিঠেপুলি আর ভ্রমণের মৌতাতে ।
#শীত_শীত_কবিতা
..............................................................................................................................
রুপম গুপ্তের লেখা  শীত শীত কবিতা -----
শহুরে ধোঁয়া,ধাঁরালো বিকেল,
চায়ের দোকান ,কুয়াশা লাগা
আবছা নদী ,চাদরে প্রেম
বার্ণিক এর গল্প –
.......................................................................................................................................
গন্তব্য
প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ
চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে নেমেই হনহন করে হাঁটতে শুরু করেছে সুনীল । সাতটা বেজে গেছে । সবাই এসেও গেছে । ওর জন্যই গাড়ি ছাড়া যাচ্ছেনা । এর মধ্যেই সুনীলকে ফোন করে চরম খিস্তি মেরেছে সৌমিক । তাতে অবশ্য সুনীল কিছু মনে করেনি । উল্টে ব্যবহার করেছে আরও জোরালো খিস্তি । সেই কলেজ লাইফ থেকেই সৌমিককে দেখে আসছে সুনীল । জানে পাল্টা খিস্তি না দিয়ে সৌমিককে থামানো চাপ আছে । কোথাও না দাঁড়িয়ে সোজা স্টেশনের যে জায়গায় সরকারী গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে এসে পৌঁছয় সুনীল ।
---হ্যাঁ এটাই । জাইলো গাড়ি বিয়ারিং নাম্বার ০৮১২ । এমনটাই কথা হয়েছিল কাল রাতে । ওদের হোয়্যাটস অ্যাপ এর ‘খেলো’ গ্রুপে । আনিরুল সেরকমই লিখেছিল । আনিরুল গাড়ি অ্যারেঞ্জ করার দায়িত্বে আছে । ‘খেলো’ দের ভাষায় অবশ্য ও সি -গাড়ি ।  সুনীল গাড়ির কাছে পৌঁছতেই দরজাটা খুলে দিয়ে ধারের জায়গাটা সুনীলের জন্য রেখে মাঝে সরে যায় জীবন । জীবন এদের মধ্যে সবচাইতে আঁতেল । জনসংযোগের ব্যাপারটা দায়িত্ব নিয়ে দেখতে গিয়ে ঘেঁটে ফেলে বারবার । তবু ছাড়েনা ।  জীবনের মিষ্টি ব্যবহার আর প্রাণোচ্ছলতার জন্য এরা সবাই ওকে খুব প্যাম্পারও করে ।
---‘অলরেডি ৭ টা ১৫ । এবার গাড়িটা না ছাড়লে সালানপুরে পৌঁছাবার আগেই গ্রামসভা শুরু হয়ে যাবে।’ ---পিছনের সিট থেকে চিৎকার করে বিপ্লব । ---সুনীলরা সাতজন আসলে সামাজিক নিরীক্ষা শাখায় কাজ করে । একশো দিনের কাজ , ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রভৃতি কেন্দ্রীয় সরকারী স্কিমের সামাজিক নিরীক্ষা বা সোশ্যাল অডিট ফেসিলিটেট করাই ওদের মূল কাজ । সেই উদ্দেশ্যেই আজ ওরা সালানপুর উন্নয়ন ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতে সামাজিক নিরীক্ষা সংক্রান্ত গ্রামসভায় অংশ নিতে যাচ্ছে । ওদের কাজ বলতে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে কিছু সম্পদ কর্মী আছে তাদেরকে দিয়ে পুরো প্রসেসটা ঠিকঠাক ফেসিলিটেট করানো এবং অ্যাকচুয়াল ফিল্ড লেভেল রিপোর্ট তুলে আনতে ওই সম্পদ কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করা । আনিরুলের ভাষায় অবশ্য বার খাইয়ে কাজ হাসিল করে নেওয়া ।
 বিজয় আর সুন্দর সিগারেট শেষ করেই সোজা উঠে পড়ে পিছনের সিটে । মোবাইলে চোখ রাখে সৌমিক । ৭ টা ২০ । সালানপুর উন্নয়ন ব্লকের উদ্দেশ্যে ওদের যাত্রা শুরু হয় । পিছনের সিটে সুন্দর , বিজয় আর বিপ্লব । মাঝের সিটে সুনীল , জীবন আর সৌমিক । ড্রাইভারের পাশের সিট টা রাখা আছে আনিরুলের জন্য । আনিরুল গলসিতে উঠবে ।
---‘আজ এতগুলো গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রামসভা ঠিকঠাক কভার করা যাবে তো ?’ ---যথারীতি আত্মবিশ্বাসের অভাব জীবনের গলায় ।
---পাশ থেকে গর্জে ওঠে সুনীল । ---‘তোর এই এক দোষ জীবন । তোর সবই ভালো । শুধু আত্মবিশ্বাসটা তলানীতে।’---পিছনের সিট থেকে বিপ্লব বলে ওঠে –‘ এত ভয় পাস কেন বলতো ? সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে । আমরা পারিনা এমন কাজ পৃথিবীতে নেই।’
--- ‘সম্পদ কর্মী হিসেবে যাদের নির্বাচন করা হয়েছে আর সুনীল যাদের টিমলিডার বেছেছে না , গড়গড় করে কাজ এগোবে।’ ---সংযোজন করে সুন্দর । ---‘তুই একদম চিন্তা করিসনা জীবন । সম্পদ কর্মীদের প্রশিক্ষণ যেমন ফাটাফাটি হয়েছিল সামাজিক নিরীক্ষাও সেরকমই হয়ে যাবে । তুই বরং যেতে যেতে তোর নতুন গল্পের প্লট টা ভেবে নে।’---জীবনের স্বপ্ন সে বিরাট লেখক হবে । লেখক হিসেবে সাফল্য বলতে রয়েছে লিটল ম্যাগাজিনে কিছু প্রকাশিত লেখা । সেগুলো নিয়েই জীবনকে উৎসাহ দেয় এরা । এদের উৎসাহটা ঠিক পুরোপুরি উৎসাহ না বার খাওয়ানো সেটা আজও বুঝে উঠতে পারেনি জীবন ।
---‘হ্যাঁ বল । হ্যাঁ হ্যাঁ এই ঢুকে গেছি গলসি । আর দু’ মিনিট।’---আনিরুলের ফোনটা কেটে দিয়ে সৌমিকের মাথায় এক চাঁটি দেয় বিজয় ।
---‘ শালা বিপ্লবের চকচকে টাকটা ছেড়ে আমার মাথায় চাঁটি মারছিস কেন ? ’--- সহজাত ভঙ্গিমায় খিস্তি সহযোগে ঝাঁজিয়ে ওঠে সৌমিক । ---বিপ্লবের এই তিরিশ বছর বয়সেই মাথা ফাঁকা হয়ে গেছে । খুব সম্ভবত পেটের গণ্ডগোলের জন্য । বাইরের খাবার মোটেই খায়না বিপ্লব । এদের মধ্যে সবচেয়ে হাইজেনিক বিপ্লবই ।
---গলসি এসে গেছে । সিগারেটের শেষাংশ বুটের তলায় পিষে দিয়ে গাড়ির দরজা টেনে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসে পরে আনিরুল । একশো কুড়ির ও বেশি স্পীডে গাড়িটা ছুটেই চলেছে  ন্যাশনাল হাইওয়ের উপর দিয়ে । বিজয় ড্রাইভারকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে পানাগড়টা যাহোক করে তাড়াতাড়ি পেরিয়ে যেতেই হবে । ওখানে আটকে গেলেই বিপদ ।
---‘ পেপারটা মুখস্থ হয়ে গেছে রে এবার রাখ।’---আনিরুলের উদ্দেশ্যে খোঁচা দেয় সুনীল । আনিরুল আসলে পলিটিক্যাল নিউজ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে । এদের মধ্যে নেতাসুলভ অ্যাটিটিউড একমাত্র আনিরুলেরই রয়েছে । সৌমিক যতই সেটা নিয়ে ঠাট্টা করুক না কেন ফিল্ড লেভেলে কোনও সমস্যা হলে আনিরুলই সামলে দেয় । এইসব সমস্যা এলেই জীবন হাত তুলে দেয় । মুখে বলে , পলিটিক্যাল জনসংযোগের ব্যাপারটা আনিরুল তুই দেখে নে । প্রশাসনিক লেভেলে জনসংযোগের ব্যাপারটা আমি দেখে নেবো । প্রশাসনিক ব্যাপারগুলো সত্যিই খুব ভালো সামলাতে পারে জীবন । বিজয় বলে , জীবন তোর মুখটার মধ্যেই একটা সারল্য আছে যার জন্য প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিরা খুব বিশ্বাস করে । ---সুন্দর আবার পুরো ব্যাপারটা ভীষণ সাজিয়ে উপস্থাপন করে সবসময় । বলে , জীবন তুই আসলে মালা গাঁথার সুতোটা যেটা না থাকলে মালাটা গাঁথায় যাবেনা । তুই না থাকলে আমাদের সামাজিক নিরীক্ষা শাখা কে আর একসূত্রে বেঁধে রাখা যাবেনা ।
---‘যাক বাবা পানাগড় পেরিয়ে গেছি আর চিন্তা নেই ।’---অনাবিল হাসি ফুটে ওঠে সুনীলের ঠোঁটে । ওদের গাড়িটা দাঁড়িয়েছে পানাগড় দার্জিলিং মোড়ের কাছে নাগ হোটেলে ।
---কচুরী অর্ডার করে সুন্দর । জীবন আর সুনীল টয়লেট সেরে আসে । কচুরী শেষ করার আগেই বড় ভাঁড়ে চা-এর অর্ডার দেয় আনিরুল । চা-এ চুমুক দিতে দিতে উদাস দৃষ্টিতে ন্যাশনাল হাইওয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে জীবন । মনে হয় সবাই কেমন যেন নেশার মতো ছুটে চলেছে গন্তব্যের দিকে ।
---নাগ হোটেলের বিল মিটিয়ে দেয় সৌমিক । সৌমিক অফিসে ক্যাশিয়ারের কাজ সামলায় । ফাঁক পেলেই বিনা পয়সায় ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইস দিতে সিদ্ধহস্ত সৌমিক । এই বিষয়ে ওর যথেষ্টই সুনাম ।
---‘আবার সিগারেট ধরিয়েছিস । চল চল দেরি হয়ে যাবে ।’ ---তাড়া দেয় জীবন ।
---‘ দাঁড়া না । একটু আমেজ করে সিগারেটটাও টানতে দিবিনা নাকি । তুই গাড়িতে ওঠ । আমরা আসছি ।’---সুখটান দিতে দিতেই বলে সুন্দর ।
---জীবনের মতে সুন্দরের সব ভালো এই সিগারেটের নেশাটি ছাড়া । সুন্দর অবশ্য ওটাকে নেশা মনে করেনা । জ্ঞ্যানপাপীর মতো বলে , বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে কখনোই বলবো না সিগারেট টানলে মানুষের ক্ষতি হয়না । তবে নিশ্চিন্তে থাক যেদিন বুঝবো কষ্ট হচ্ছে সেদিন নিজেই ছেড়ে দেব বুঝলি । সুন্দর বরাবর ভীষণ ক্যাটেগরিক্যাল । এদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ছাত্র সুন্দরই । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে এম এস সি । জোর গলায় বলে যাদবপুর থেকে আর কিছু শিখে আসি না আসি নেশা করার ব্যাপারটা যাদবপুর ক্যাম্পাস থেকেই শিখে এসেছি । নেশার ব্যাপারে ওর সর্বক্ষণের সঙ্গী বিজয় । বিজয়ও রসায়নে এম এস সি ।
---‘ আসানসোল জুবিলী মোড় চলে এলো মনে হচ্ছে ।’--- চোখ কচলাতে কচলাতে জিজ্ঞাসা করে বিপ্লব ।
---‘ যাক তোর ঘুম ভেঙেছে । কাল রাতে বৌদি কি তোকে ঘুমোতে দেয়নি ?’ ---হাসতে হাসতে বলে ওঠে সৌমিক । সৌমিকের মুখে আসলে কোনও কথায় আটকায় না । এরা কেউ সৌমিকের কথায় কিছু মনেও করেনা । বোধহয় কেউই কারও কথায় কিছু মনে করেনা । লোকে বলে কলিগদের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়না । কিন্তু এরা সব ভাবনা –চিন্তার ওপরে । বিজয় এদের সবাইকেই শুধু বলে , ‘তুই আমার ভাই রে !’ ---সৌভ্রাতৃত্ব বোধ পুরোপুরি বিদ্যমান এদের মধ্যে । --- এদের দেখে একবারও মনে হয়না যে কোনও অফিসিয়াল কাজে যাচ্ছে । মনে হয় বন্ধুরা মিলে হইহই করে পিকনিকে যাচ্ছে । এদের সঙ্গে ড্রাইভারও অভ্যস্ত হয়ে গেছে ।
 ‘দারুন গ্রামসভা হল কি বলিস তোরা ?’ ---সবার উদ্দেশ্যেই প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়ে জলের বোতলটা থেকে ঢকঢক করে বেশ কিছুটা জল গলার ভেতরে চালান করে বিজয় । ---‘আমার ওখানে তো খুব অর্গানাইজড হয়েছে গ্রামসভা । সম্পদ কর্মীরা খুব ভালো প্রতিবেদন পাঠ করেছে । প্রধান সাহেবও ভীষণ ভালো উত্তর দিয়েছেন সবকিছুর । খুব এফেক্টিভ ।’
---‘ আসলে গ্রামসভায় বলার পরিবেশ তৈরি করাটাই বড় কথা । আমার ওখানেও আলোচনার মাধ্যমে কিছু বিষয় উঠে এলো । একশো দিনের কাজ সংক্রান্ত । খুব ভালো সমাধান সূত্রও উঠে এলো ।’---সংযোজন করলো আনিরুল ।
---ইতি উতি চাইছে সুন্দর । সিগারেট ধরাতে চাইছে কিন্তু সন্ধ্যা নেমে গেছে বলে গাড়ি থামাতে বলতে পারছেনা । বিজয় হঠাত বলে উঠলো , দুর্গাপুর পেরোলে একবার দাঁড়াবে ভাই । ইঞ্জিনে ধোঁয়া দিতে হবে । তারপরই গলা ছেড়ে গান ধরলো বিজয় –‘যেতে যেতে পথে হলো দেরি...’ ---বিজয় একসময় ব্যান্ডে ড্রাম বাজিয়েছে । গানের প্রতি ওর অদ্ভুৎ নেশা । গানের গলাটিও চমৎকার ।
 কর্পোরেট চাকরি ভালো না সরকারী চাকরি এটা নিয়ে এবার বকবক শুরু করেছে সৌমিক । সঙ্গে পেয়েছে জীবন আর সুনীলকে ।
---‘কর্পোরেট চাকরিতে প্রচুর টাকা রোজগার করা যায় কিন্তু খরচ করার সময় পাওয়া যায়না । ফ্যামিলি বলে কিছু থাকেনা কর্পোরেটে , অফিসটাকেই বাড়ি বানিয়ে ফেলতে হয় । মানে নিজের কিউবিকল এর গণ্ডির মধ্যেই এক টুকরো স্বাধীন সংসার ।’--- এই ব্যাপারে বরাবর ভীষণ স্ট্রং ওপিনিয়ন সুনীলের । মোটা বেতনের কর্পোরেট জব ছেড়ে সে সরকারী চাকরি জয়েন করেছে । এই বিষয়ে অন্তত সুনীলকে ঘাঁটাবার ধৃষ্টতা এরা কেউ দেখায়না ।
 জানালার ধারে বসে চুপচাপ মোবাইলটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছে সৌমিক । মুডটা কোনও কারনে অফ হয়েছে মনে হচ্ছে ।
---‘কিরে সৌমিক হঠাত গুম মেরে গেলি কেন ?’ ---ড্রাইভারের পাশের সিট থেকে কড়া ভঙ্গিতে প্রশ্নটা ছুঁড়লো আনিরুল ।
---‘ না , আসলে একটা বিয়ে বাড়িতে নিমন্ত্রণ ছিল আজ । বাড়ি পৌঁছতেই তো রাত হয়ে যাবে । আর বিয়ে বাড়ি যাওয়া যাবেনা । তোরা তো জানিস আমি খেতে খুব ভালোবাসি । খাওয়া মিস হবে বলেই মুড অফ ।’ --- সৌমিকের গলায় গভীর হতাশা ।
---পিছন থেকে হঠাত নস্ট্যালজিক হয়ে পড়ে বিজয় । ---‘ খাওয়া নিয়ে বলতেই মনে পড়ে গেল – কলেজ হোস্টেল থেকে কত বিয়ে বাড়িতে যে খেয়েছি তার কোনও ইয়ত্তা নেই । বিয়ের দিন থাকলেই রাতে মিল অফ করে দিতাম । দুই –তিনজন মিলে গিয়ে সাঁটিয়ে দিতাম । কোনোদিন কোনও প্রবলেম হয়নি ।’
---‘ তাহলে আজও হয়ে যাক । পানাগড় পেরিয়ে ন্যাশনাল হাইওয়ের ওপর কোনও বিয়ে বাড়ি পেলেই ঢুকে পড়বো সবাই মিলে । ডান ?’ ---সুনীলের গলায় তখন কলেজ লাইফের উন্মাদনা ।---সকলেই সমস্বরে বলে উঠলো ডান ।
 ওদের কথা মতো বুদবুদের কাছে জাতীয় সড়কের পাশেই একটি বিয়ে বাড়ির সামনে গাড়িটা পার্ক করেছে ড্রাইভার । বিয়েবাড়ির চারদিক ঝলমলে আলোয় ভরে গেছে । কানে আসছে সানাইয়ের মিষ্টি সুর । দুটো একটা কার আর বাইক এসে দাঁড়াচ্ছে মাঝে মধ্যেই । ব্যস্ততা নিয়ে ইতি উতি ঘুরে বেড়াচ্ছে বিয়েবাড়ির কর্মকর্তারা । ছয়-সাতজনের একটা দল বিয়েবাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । সবাই মেয়ে । সবাই পরিপাটি করে শাড়ী পরেছে । সবাই চুলে ঝুলিয়েছে রজনীগন্ধার মালা । মনে হয় ওরাই অতিথি –অভ্যাগতদের অভ্যর্থনার দায়িত্বে রয়েছে । সুনীলদের গাড়িটা যেখানে পার্ক করা হয়েছে সেখানে খানিকটা আলো - আঁধারি । সুন্দর আর বিজয় কোথায় খাওয়ানো হচ্ছে সেটা দেখে আসতে গেছে । ড্রাইভার সহ বাকি ছয়জন গাড়ির পাশে দাঁড়িয়েই গল্প করছে । আনিরুলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে বিয়েবাড়ির গেটের দিকে । তাকিয়ে আছে অপলক । হয়তো সুন্দর আর বিজয়ের ফেরার অপেক্ষা করছে । জীবন কি রকম যেন একটা থ্রিল অনুভব করছে । আসলে ও আগে কোনোদিন এভাবে খেতে আসেনি । আজকের ব্যাপারটা ও পুরো অ্যাডভেঞ্চার হিসেবেই নিয়েছে ।
---‘চল চল । ব্যাচ উঠেছে । আর দেরি করা যাবেনা । অলরেডি ৮ টা ৫ ।’---সুন্দরের নির্দেশ পাওয়া মাত্রই ওরা স্মার্টলি এগিয়ে যায় বিয়েবাড়ির গেটটার দিকে । জীবন খেয়াল করে সুসজ্জিত গেটটাতে আলো জ্বলছে আর নিভছে । বারবার লেখা ফুটে উঠছে সুমনা ওয়েডস সুব্রত ।
---খাওয়া দাওয়া সেরে বেরিয়ে আসছে ওরা । সুনীল একটা লম্বা ঢেঁকুর তুলে বলে , খুব তৃপ্তি করে খেলাম ভাই । জানিসই তো আমি মাংস খেতে খুব ভালোবাসি । ---বিজয় বলে ওঠে , দারুণ রান্না হয়েছিলো চিকেনটা । এখনও মুখে লেগে আছে । ---মোবাইলে সময়টা দেখে নেয় সৌমিক । নটা বাজতে দশ । ‘ দুগগা দুগগা করে বেরিয়ে পড়ি চল তাহলে বর্ধমান স্টেশন থেকে দশটার কর্ড লাইন লোকাল টা পেয়ে যাব ।’---বেশ উত্তেজিত শোনায় সৌমিকের কন্ঠস্বর ।
---আনিরুল হঠাৎ খেয়াল করে খাবার জায়গার উল্টোদিকটাতে একটা জটলা তৈরি হয়েছে । ওইখানেই বরের বসার জায়গা রয়েছে । হঠাৎ  সানাইটা বন্ধ হয়ে যায় । সানাইটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরই বোঝা যাচ্ছে চিৎকারটা । আওয়াজটা ভেসে আসছে বরের বসার জায়গাটার ওদিকটা থেকেই । মুহূর্তে পরিবেশটা কেমন থমথমে হয়ে গেছে । ---‘ তোরা এখানেই একটু দাঁড়া , আমি আসছি ।’--- বলেই বরের বসার জায়গার দিকে এগিয়ে চলে আনিরুল । পিছু পিছু ওরা সবাই ।
---‘আর মাত্র আধ ঘন্টা পরেই লগ্ন । তুমি যদি আমার মেয়েটাকে বিয়ে না করো তাহলে মেয়েটা লগ্নভ্রষ্টা হবে বাবা । ওর আর বিয়ে হবেনা ।’--- বরের পা দুটো ধরেই  কাকুতি -মিনতি করছে মেয়ের বাবা । ---মুখটা বাঙলার পাঁচের মতো করে ধোপদুরস্ত পাঞ্জাবী পরিহিত বর ফ্যালফ্যাল করে মেয়ের বাবার দিকে তাকিয়ে আছে । ---মুহূর্তে ভিড় জমে গেছে ওখানে । বিভিন্ন লোক বিভিন্ন কথা বলছে । কে একজন বলে ওঠে , তখনই বলেছিলাম অনুপমদাকে । সমানে সমানে সম্পর্ক করাই ভালো । সাত লাখ টাকা নগদ , রয়্যাল এনফিল্ড গাড়ি , অল ফার্নিচার , দশ ভড়ি গহনা – তোমার পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব । শুনলোনা আমার কথা , হাই স্কুলের মাস্টার জামাই করবার জন্য ঝাঁপাতে গেল । তখন আমার কথা শুনলে আর এই বিপত্তি হতো না । চাষিবাসী ঘরেই বিয়ে হত না হয় । তবু তো মেয়েটা সংসার করতে পারতো । ---থরথর করে হাত দুটো কাঁপছে আনিরুলের । বাবা মারা যাওয়ার পর নিজের দায়িত্বেই বোনের বিয়ে দিয়েছে আনিরুল । এই সিচুয়েশনের অভিঘাতটা সবচাইতে বেশি বুঝতে পারছে আনিরুলই । ‘ বাঞ্চতকে কেলিয়েই দেবো আজ ।’--- উত্তেজনায় ফুটছে আনিরুল ।
--- ‘ কি লাভ মারধোর করে ! জোর করে বিয়ে দিয়েই বা কি লাভ ! মেয়েটা তো আর সুখী হবেনা।’--- জীবনের গলায় হতাশা । ---অফিসিয়াল কাজের দিক থেকে দেখতে গেলে জীবনরা একধরণের সমাজকর্মীই । কি লাভ ওইসব তকমা নিয়ে । সমাজের কোনও কাজেই তো আসেনা ওরা । জীবনের হতাশা বাড়তে শুরু করে ।
---ওরা খেয়াল করে ছেলের হাতটা ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে বরের বাবা । ---‘ যেখানে কথার কোনও দাম নেই সেখানে আমার ছেলের বিয়ে দেব না । বিশ পঞ্চাশ হাজার হয় বাকি রাখা যায় । তাই বলে তিন লাখ টাকা বাকি তে আমার ছেলের বিয়ে দেব না । ছেলে আমার হাই ইস্কুলের ইতিহাসের মাস্টার । ভালো পরিবারে আমার ছেলের বিয়ে দেব ।’--- গর্জন থামছেই না ছেলের বাবার । ---বরের মাথা থেকে শোলার মুকুটটা খুলে মাটিতে পড়ে যায় । বরের চোখে মুখে একটা উত্তেজনা ফুটে উঠছে । হয়তো বিয়ে না করে চলে যেতে মন চাইছে না । কিন্তু বাবার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার সৎসাহস বা মেরুদণ্ড কিছুই পরিলক্ষিত হচ্ছে না । মুখ দিয়ে কথা সরছে না হাই ইস্কুলের ইতিহাসের মাস্টারের ।
---বরযাত্রী সহ বর চলে গেছে । বরযাত্রীরা যাবার সময় নানান ধরণের ফুল দিয়ে সাজানো বিয়েবাড়ির গেটটা ভেঙে দিয়ে গেছে । সুনীল খেয়াল করেছে ফুল গুলো ছিঁড়ে ওরা জুতোর তলায় পিষে দিয়ে গেছে । সুনীলের মনে হচ্ছে শুধু ফুল নয় ওরা যেন পিষে দিয়ে গেল সভ্যতাকেই । গেটে আর আলোও জ্বলছে না । সুমনা ওয়েডস সুব্রত লেখাটাও আর ফুটে উঠছে না । অতিথি –অভ্যাগতদের অভ্যর্থনার দায়িত্বে ছিল যে কিশোরীদের দল তারা ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেছে । চুল থেকে রজনীগন্ধার মালা খুলে ফেলেছে ওরা ।
---ছাঁদনা তলায় বসে আছে কনে । গলার রজনীগন্ধার মালাটা ছিঁড়ে ফেলেছে । চোখের জলে কনের সাজ ধুয়ে মুছে গেছে একেবারে । মনে হচ্ছে যেন সবে বিয়ের দৃশ্যের শট দিয়ে ক্লান্ত । মেকাপ তুলতে পারলে বেঁচে যায় । মেয়ের মা মূর্ছা গেছে । ওদিকটাতে মেয়ের মা’র মুখে হাতে জলের ছিটে দিচ্ছে মেয়ের মাসি-পিসিরা । মেয়ের বাবা কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে মনে হচ্ছে । কান্নার শক্তিও বোধহয় আর অবশিষ্ট নেই । পাশ থেকে একটা বিধবা বুড়ি চিৎকার করছে –‘ মেয়েটা লগ্নভ্রষ্টা হল গা । এমন অলক্ষুণে মেয়েমানুষ কে বাড়িতে রাখাও পাপ ।’---বিধবা বুড়িটার বিধান কেউ শুনছে বলে মনে হচ্ছে না । কোনও প্রতিবাদও ভেসে আসছে না কোনোদিক থেকেই ।
 জীবনকে সঙ্গে নিয়ে ছাঁদনা তলার দিকে এগিয়ে চলেছে সুন্দর । জীবন একটু কনফিউজড । তবে এই মুহূর্তে আত্মবিশ্বাসের কোনও খামতি নেই জীবনের । যে কোনও লেভেলের জনসংযোগ সে অবলীলায় করে দেবে যেন । ---বুক চিতিয়ে হাঁটছে সুন্দর । তার পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চির সুঠাম চেহারার পাশে জীবনের ছোটোখাটো চেহারাটা বড্ড বেমানান লাগছে । সব কিছু মিলিয়ে জীবনের মনে হচ্ছে –‘ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন । ’---যাদবপুরের ক্যাম্পাস থেকে সুন্দর যে শুধুই নেশার ব্যাপারটা নিয়ে এসেছে তা বোধহয় নয় । মুখ থুবড়ে পড়া সভ্যতাকে স্বমহিমায় কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় সেটাও সে শিখেছে যাদবপুরের ক্যাম্পাস থেকেই । এটাও এক ধরণের কলরব , যে কলরবে শব্দ হয়না । পাশে পাওয়া যায় অসংখ্য প্রগতিশীল মানুষকে । সুন্দর আর জীবনের পিছু পিছুই এগিয়ে চলেছে সুনীলরা । সুনীল , বিজয় , বিপ্লব , আনিরুল , সৌমিক আর ড্রাইভার । সুন্দরের এই অ্যাটিটিউডটা এদের সবার কাছেই অপরিচিত । সুন্দরের চোখে মুখে একটা অদ্ভুত দ্যুতির প্রকাশ পাচ্ছে । ---আকাশে আজ অনেক তারা । সারা আকাশ জুড়ে তারা গুলো জ্বলজ্বল করছে । বিয়েবাড়ির অধিকাংশ লাইট নিভে গেছে । আলো -আঁধারিতে আজ আকাশটাকে খুব নির্মল দেখাচ্ছে । ---সুন্দরের দিকে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জীবন । সুন্দরকে এতটা আনপ্রেডিক্টেবল কখনও মনে হয়নি । একটু পিছনেই সুনীলরা । উত্তেজনায় যেন ফুটছে সবাই । ---আকাশের চাঁদটাকে আজ ভীষণ রকমের মায়াবি মনে হচ্ছে সুন্দরের । চাঁদটা যেন কনে -বউ সেজে সুন্দরকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে । একটু পিছনেই ওরা সবাই । সুন্দর গন্তব্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত ওরাও থামবেনা মনে হয় । সুন্দরের বুকের পাশ দিয়ে একটা জোনাকির ঝাঁক পেরিয়ে যাচ্ছে । জোনাকি গুলো জ্বলছে –নিভছে , জ্বলছে –নিভছে । ওরা সবাই ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে দেখছে -জোনাকি গুলোর জ্বলন্ত অবয়বে ফুটে উঠছে সুন্দর ওয়েডস সুমনা । দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে সুন্দর । গন্তব্যের দিকে ।
বার্ণিক এর কবিতা –
একা একা দেখা
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
..................................................................................................................................................
২.
পুকুরের দিকে একটা পথ
অনেক বাড়ির ছায়া নেয়
মাছেরা জানে
কিভাবে চাঁদ খেয়ে নেয়
আদুল গা
আঁশগন্ধ রেখে
পর্দার গায়ে শুধু কাঁটা দেয়
বার্ণিক এর কবিতা –
অপেক্ষা
      সম্পর্ক মন্ডল
..................................................................................................................................................
এইভাবে আরও একটা দিন কেটে যাবে
এইভাবে আরও একটা রাত
           কুচিকুচি করে ভাসিয়ে দেবো জলে
এই গ্রাম এই মফস্বলের ভেতর আমি শুধুই
পাক খেয়ে চলেছি দিনরাত
এই তেলেভাজারর দোকান পুরানো চায়ের দোকানে আমি
ঘুরছি পাক খাওয়া মাছির মতো
আর ধুলোময়লার ভেতর উড়তে উড়তে
অপেক্ষা শুধুই
কোনো অচেনা ভোরে খবরের কাগজে
আমার কঙ্কালসার ধূসর ছবির
বার্ণিক এর কবিতা –
বৃষ্টিকাঁচের ফোঁটা- ২
দেবযানী বসু
..................................................................................................................................................
প্যালেটে জ্বলে যাচ্ছে আশ্চর্য আপেল।ভিজি বাদামগাছের অশ্রুতে।নখে আঁকা ছবিতে বুটিদার শরীর।একের পর এক মানুষকে বিদায়।বাঁধের হাজার আঙুল টানটান।মানুষের কপাল মানুষ খুলে ফেলে।টিপ খুলে পড়ে কাহিনি নিয়ে। চোরামনের কেউ আঁকছে আমাকে।
বার্ণিক এর কবিতা –
মনোবিকলন এবং.... 
পল্লব গোস্বামী
..................................................................................................................................................
জোড়হাত করেছি,
নতজানু হয়েছি,
বারবার ঘুরে ফিরে দাঁড়িয়েছি-
হাড্ডিসার মোরামের পথে ।
দাঁতে দাঁত চেপেছি ,
নাকখত্ দিয়েছি ,
ভার্চুয়াল পৃথিবীর পাঁক
থেকে পানশালা পর্যন্ত
দৌড়েছি হুলুস্থুল হয়ে  ।|
কোথাও বাদ দিয়নি,
কিচ্ছু ছাড়িনি,
পান থেকে চুন খসে পড়বার আগেই
বিকটভাবে শুষে নিয়েছি নিষিদ্ধ মাদক ।
অথচ
আজ সেই বাইশে বসন্ত ;
নির্ঘাত তার ফিরে আসার দিন ।
ছেনাল গদ্যে প্রশ্ন করার দিন  ,
"কেন এমন  হয় ? "
উত্তর..,থুড়ি
বজ্র-গর্ভ মেঘও তৈরি রয়েছে ঠিক তার মতোই ।
প্রেম এখন মধ্য রাতের এক উদ্ভট মাতাল...
যে'কিনা
একশো আটটা প্রায়শ্চিত্তিক পরিখা ডিঙিয়ে,
ঝাঁপ মারতে চাইছে-
নারকোটিক নাইট ফলসের জলে ।
বার্ণিক এর কবিতা –
আমিতো এইরকমই
-      নরেশ রায়
..................................................................................................................................................
তোমরা যা খুশি বল
কিচ্ছু যায় আসেনা
তোমার তোমাদের বিরুদ্ধে
আমার অনেক আছে বলার l
তোমাদের মানচিত্রের মাথায়
যে বেহস্ত যেখানে হুর পরীরা
নাচে গায় গোলাপের গুলদস্তায়
আতর গন্ধে মাতায় l
আপেলে আনারে এপ্রিকটে
চেরী রকমারি বাগিচায়
ভুখন্ডের শোভা বাড়ায় l
আমাকে ঘুমোতে দেয়না
পরাণে পাথর রেখে
পাঁজরে রক্তক্ষরণে হিসাবে
গোলমাল হয়ে যায়
নিজের নাক কেটে তোমাকে
উত্তক্ত করি খাল কেটে
কুমীর পালন করি নিজের
চৌহদ্দীর সীমানায় l
মানচিত্রের মাথার উষ্ণীষ
আমার সর্বাঙ্গে মাখায় বিষ
না বসতে না ঘুমোতে  দেয়
তাড়িয়ে নিয়ে যায়
অশান্তির আসল ঠিকানায় l
কি এক অনাত্মীয়ের
আজন্ম বৈরীতার বোধ কাজ করে
           যদিও একদিন
একসাথে বেড়েছি খেলেছি
শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়েছি একই
দেশাত্ববোধের হাওয়ায় l
বার্ণিক এর কবিতা –
প্রাপ্তি
অপর্ণা বসু
..................................................................................................................................................
           আমি আবোল তাবোল বকছি
           তুমি নিরুত্তর ছিলে
           রাতের উপর রাত ঘুমাল শেষে
           হলুদ জবা ফুটল সকাল হলে
           কখনও আমি আসনপিঁড়ি হলে
           তুমি সাজাও আমার ভাতের থালা
            পিঁপড়ে হাঁটে সারা দুপুর ধরে
            জড়িয়ে ধরি রোদ্দুরের গলা
            সাতাশ বছর নয়ত কিছু কম
             অভিজ্ঞতা আরও লম্বা ফিতে
            পেরিয়ে এলাম একগলা জল নদী
            ভয় কি তোমার হার অথবা জিতে।
বার্ণিক এর কবিতা –
থার্মোপলির যুদ্ধ
স্বরূপ মুখার্জ্জী
..................................................................................................................................................
          
রত্নগিরি পাহাড়ের উচ্চতা একশো ষাট ফুট
শুনেছি একশো ষাট ফুট উচ্চতায় পৌঁছে তবে নাকি রত্নগিরিতে পৌঁছানো যায়
আমার কাছে মোটেই এটা ক্লান্তিকর অভিজ্ঞতা নয়
একটা কবিতা লেখার থেকে নিশ্চয় বেশি ক্লান্তিকর নয় !
তবে তুই যেখানে বসে আছিস সেখান থেকে পাতালের দূরত্ব বেশি নয়
নদী বন্দর হলে নাব্যতা বেশি হত না
কারণ এর আগেও তোকে নিয়ে আমার দুটো কবিতা লেখা হয়েছে ৷
গতকাল রাত্রে স্বপ্ন দেখেছি ,স্বপ্নে এসেছিল গ্রীক দেবতা জিউস
তুই তো জানিস—এশিয়ার মাইনর থেকে ঘাস জমির খোঁজে আমি রোম সভ্যতায় জন্মগ্রহন করেছিলাম
দেশটির পশ্চিমপ্রান্ত দিয়ে বয়ে চলেছে টাইবার নদী
দাসদের কেনা-বেচার জন্য যে নদীতে তাদের স্নান করানো হতো
আমি জানি এসব লিখলেও আর আর্য সভ্যতায় ফেরা যাবে না
সপ্তনদীতেও পৌঁছানো যাবে না—সরস্বতী ও দৃশদ্-বতী শুকিয়ে গেছে
ইতিহাস সাক্ষী গজনীর সুলতান সবুক্তগিন পাঞ্জাব ও কাশ্মীর জয় করেছিলেন
তাঁর ছেলে সুলতান মামুদ সতেরো বার ভারতবর্ষ আক্রমন করেছিলেন
ভারতবর্ষের সম্পদকে লুন্ঠন করেছিলেন,কিন্তু ভারতবর্ষে স্থায়ী রাজত্ব করেননি
ইতিহাস বলে তিনি লুটপাঠ করতেই পচ্ছন্দ করতেন,নারী হৃদয় কেউ তিনি জোর করে লুঠ করতেন ৷
তুই যেখানে বসে আছিস সেখান থেকে ইতিহাস দেখা যায় না
প্রাচীন কোনো সভ্যতা দেখা যায় না
মাঝে-মাঝে জীর্ণ সেতারের শব্দ শুনতে পাই
কখনো শীত মরসুমি ফসল ফলে তোর স্মৃতির কভার পেজে
ছাব্বিশ মাইল দৌড়ে ফিডিপাইডিস ম্যারাথনের প্রান্তরে প্রাণ ত্যাগ করল
অর্বাচিনের লেখাটিও এখানেই অকস্মাৎ প্রাণ ত্যাগ করল,জায়গাটি ম্যারাথন নয়
শীতের জড়তাগ্রস্ত কূয়াশায় মোড়া অন্ধকার রাজপথের চোরা কুঠুরিতে ৷
বার্ণিক এর কবিতা –
এদিন শীতকাল
বিদিশা দাস
..................................................................................................................................................
  ধরো এক ফিরোজা সন্ধ্যায় তুমি আমি কাছারির মাঠে বসে আছি,
ঘরে ফিরছে মানুষ সান্ধ্যভ্রমন সেরে ।
এক আশ্চর্য নীল কুয়াশা নামছে ধীরেধীরে,
যত না বলা শব্দেরা প্রজাপতি হয়ে উড়ছে আমাদের ঘিরে।
অথচ কথা হয়ে উঠছে না তারা !
তাহলে নিশ্চিত জেনো,সেদিন শীতকাল।
ধরো,আজ মায়াবী গোলাপী জ্যোৎস্নায় জেগে আছে রাত চুপচাপ,
তুমি আমি বড় কাছাকাছি অথচ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে
হাজারখানেক অভিযোগ আর তুমুল দোষারোপ সেরে,
জানালায় উঁকি দেয় আলো আঁধারিয়া ছায়াশরীর,
আমিও জেগে আছি অনন্ত নৈঃশব্দ্যে।
আর এই যে কাগজের উপর ধূসর বিষাদের শব্দমালা লেখার চেষ্টা করে চলেছি একাএকা,
খুঁজে চলেছি জীবনের একফোঁটা ওম কুয়াশাচ্ছন্ন চোখে;
অথচ তুমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন !
আমি নিশ্চিত, আজ এখন শীতকাল ।।
বার্ণিক এর কবিতা –
তামাকচাপা ভয়
সীমান্ত হেলাল
..................................................................................................................................................
 স্থান, সময়, ব্যক্তিভেদে বদলে যায় আমাদের সম্পর্কগুলো...
আনকোরা শৈশব
দুরন্ত কৈশর
উন্মত্ত যৌবন
বেহিসেবি জীবনে নিয়ে আসে নৈর্ব্যক্তিক ক্ষুধা!
দেশলাইকাঠি জ্বালানোর যথার্থ ব্যাকরণ আত্মস্থ করিনি বলেই
জীবন ফুরিয়ে যাওয়ার তামাকচাপা ভয়...
বার্ণিক এর কবিতা –
খিদে
ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য্য
..................................................................................................................................................
।। এক।।
দূরে যে ক্ষীণ আলোটা দেখা যায়,
তার প্রতীক্ষায় আছি...
যদিও জানি, কাছে এলে
আমার আজন্ম অন্ধকারে থাকা চোখদুটো নষ্ট হয়ে যাবে।
।। দুই।।
গর্তগুলোর ব্যাস দিন-দিন কমে আসে,
তবু খাবার খোঁজা থামে না।
বার্ণিক এর কবিতা –
খোঁজ
রুমকি রায় দত্ত
..................................................................................................................................................
অজস্র ভিড়
বয়ে চলা স্রোত
একপায়ে দাঁড়িয়ে
একা ল্যাম্পপোস্ট জীবন ।
এখনও বাকি আছে  খোঁজ
একটা গরাদহীন চিলেকোঠায়
শূন্যদৃষ্টি আকাশভেদি
এলোমেলো সবুজ অক্ষর
ছুটে চলে মহাশূন্য পথে
একটা খোঁজ......
ঝুলে আছে জন্মান্তর ধরে
একা ল্যাম্পপোস্ট জীবন ।
বার্ণিক এর কবিতা –
গল্প
ইমরাজ হাসান
..................................................................................................................................................
তোমার একটা নিজস্ব গল্প আছে না?
সেটাই বলো?
সামনে দর্শকের ভিড়, তুমুল কৌতুহল।
বলো সুতপা!  তুমি লেখিকা হলেও
তোমার নারী জন্মের পাপগল্প শুনবো।
রান্নাঘরে ভাত হতে হতে,
একটি গল্প
বিছানায় পা ছড়িয়ে রক্ত মুছতে মুছতে,
একটি গল্প।
একটি গাছ, ফুল, মোমবাতি অথবা আলমারি! 
এসব কিছুই নয়? তবে- আকাশ, মেঘ, ঝড়! 
না হয় বসন্তের গল্পই হোক।
তোমার প্রেমিকের চোখ, যে দৃশ্য এঁকেছে;
কোলাহল, স্বচ্ছ রক্তের অনুভব শরীরে...
স্পর্শ পেলেই উড়ে যাচ্ছে পায়রা, ঝাঁক শিউলি।
চুপ করে থেকোনা, যাহোক কিছু বলো! 
না হলে অদ্ভুত রং মেখে রাস্তায় দাঁড়াও।

Saturday 7 January 2017

বার্ণিক সাহিত্য সম্মান

নতুন করে আর জানানোর নেই , তবুও আরও একবার । আট বছর ধরে প্রকাশিত “সৃজন” সাহিত্য পত্রিকা নাম পরিবর্তন করে “বার্ণিক” সাহিত্য পত্রিকা নামে প্রকাশ হতে চলেছে । এই “সৃজন” থেকেই গত তিনবছরে আয়োজন করা হয়েছিল “সৃজন সাহিত্য সম্মান” অনুষ্ঠানের । “সৃজন সাহিত্য সম্মান” ২০১৪ পেয়েছিলেন কবি অভিজিৎ মণ্ডল এবং প্রাবন্ধিক ড. মঞ্জু সরকার । “সৃজন সাহিত্য সম্মান” ২০১৫ পেয়েছিলেন কবি শঙ্করনাথ প্রামাণিক । মাঝে এক বছরের বিরতি । ....................................................................................... আবার সময় হয়েছে । বার্ণিক প্রকাশন ও বার্ণিক সাহিত্য পত্রিকার উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে “বার্ণিক সাহিত্য সম্মান ২০১৭” র । সংযুক্ত করা হয়েছে – “লিটল ম্যাগাজিন সম্মাননা” । কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিকদের কাছে অনুরোধ উপরের নিয়মাবলী দেখে আপনার বই বা আপনার সম্পাদিত পত্রিকা আমাদের ঠিকানায় পাঠান । বই ও পত্রিকা পাঠানোর শেষ তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি । বিস্তারিত জানতে কথা বলুন অথবা whatsapp করুন ৮৩৯১০৫৮৫০১ তে । আমাদের email : amdrbarnik@gmail.com

বার্ণিক পত্রিকা ও বার্ণিক প্রকাশনে আপনাকে স্বাগত ।