Friday 10 March 2017

বার্ণিক এর অণুগল্প – 
.......................................................................................................................................
অপেক্ষা
পরিমল হাঁসদা

মকর সংক্রান্তি।ওই দিনটাতেই নাতনী রুমকীকে বেশি মনে পড়ে কনকলতা দেবীর ।দেখতে দেখতে তিন বছর পেরিয়ে গেল ।বিয়ের পরে কী হল মেয়েটার!রুমকীর মুখটা মনের মধ্যে ভেসে উঠলেই কনকলতা দেবীর ছোখটা ছলছল করে ওঠে ।
ছেলে বিমলকে কতবার যে নাতনী ও নাত জামাইকে আনতে যেতে বলে নিজেই ধমক খেয়েছে তার হিসেব নেই ।তাঁর স্বামী কমলাকান্ত সুত্রধর বেঁচে থাকা পর্যন্ত সংসারটা ছিল কতইনা সোনায় সোহাগা ।কমলাকান্তের পরলোক গমনের সঙ্গে সঙ্গেই সংসারের সুখ সাচ্ছন্দ আনন্দও চিরতরের মত বিদায় নিল ।জাতে তাঁতি ছিল বলে তাঁদের চরকাতেই কাপড়চোপড় বিক্রি করে সংসারটা দিব্যি চলে যেত ।এখন বিদেশী মেশিনের গুঁতোয় গামছা পর্যন্তও কেউ নিতে চায়না ।নিজেই কয়েকবার আশেপাশের সাঁওতাল বাউরী মাহাত পাড়াগুলিতে গামছা বিক্রি করতে গিয়েছিল ।তাতে লাভের তুলনায় লোকসানটাই বেশি হল ।সে কারনে বউমার গালিও হজম করতে হয়েছিল ।
এখন সংসারের আয় বলতে বিমলের পঞ্চায়েত থেকে একশ দিনের কাজের মজুরী এবং ফরেস্ট অফিস থেকে মাঝে মধ্যে কাঠ লরীতে বোঝায় করার জন্য কাজের ডাক পেলে যা আয় হয় সেটাই ।অভাবী সংসারে অসুখ বিসুখ লেগে থাকে বলে বেশিরভাগ সময়েই ধার করে সংসার চলাতে হয় ।তাই রুমকী এর সম্বন্ধ আসতেই ষোলো বছর বয়সেই বিয়েতে রাজী হয়ে গেলেন কনকলতা দেবীও ।বর আমেদাবাদের ।ওদেরও নাকি কাপড়চোপড়ের দোকান আছে।‌‌‌‌ জীবিত থাকাকালীন স্বামীর কাছেই শুনেছিল আমেদাবাদের বস্ত্র শিল্পের  কথা ।তাই আদরের নাতনীর জন্য ওই রকম নাত জামাই এর কথা শুনে আনন্দে ঊৎফুল্ল হয়েছিল কনকলতা ।তবে অত বড় শহর থেকে বাঁকুড়া জেলার এত প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামের গরীব মেয়েকে একেবারে বিনে পণে বিয়ের ব্যাপারে পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে কানাঘুষো চললেও কনকলতা দেবী তাতে কোনো কান দেয়নি ।সে একটা জবাবই দিয়েছিল.......’শহরের হোক আর গাঁয়ের হোক সবাই মানুষ ত ‘।
কিন্তু তাঁর আশাটা হতাশায় পরিণত হল যখন তিন বছরেও রুমকী বাপের বাড়ি এলনা ।কাউকে জিজ্ঞেস করেও সে সুদুত্তর পায়না ।ছেলে বিমলও কথা ঘুরিয়ে দেয় যেন মেয়েকে বি‌‌‌‌‌‌য়েকে দেওয়ার পরেই তাঁর দায় চুকে গেছে ।এবার বয়সটাও অনেক হল ,বাড়ি থেকে বেরোতে পারেনা আগের মত কনকলতা দেবী ।তাই উঠোনে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে  ,    যদি রুমকী হঠাৎ নিজে থেকেই বাপের বাড়ি চলে আসে ।
এবারও আগের বছর গুলোর মত নিয়মের বদল করেনি কনকলতা দেবী ।তাঁর অনেক দিনের ইচ্ছে রুমকী ও নাত জামাইকে নিজের হাতের তৈরি নারকেলের পুর পিঠে খাওয়াবে আর টুসু ভাসানে ঝুমুর গান গেয়ে শোনাবে।তাই বিমলকে যেমন করেই হোক পাঁচ ছ খানা নারকেল কিনে আনতে বলেছিল ।নিজের জমানো টাকায় পাশের বাড়ির ছেলেদের দিয়ে মহলদার দের কাছ থেকে টাটকা খেজুর গুড় কিনে আনিয়েছে ।
কিন্তু নিয়তির একি খেলা এবারও রুমকী এলনা ।মকর সংক্রান্তির রাত্রিতে সবাই যখন ভাগ বাটোয়ারা করে পিঠে খাচ্ছিল তখন রুমকীর জন্য আলাদা করে সযত্নে কুলুঙ্গিতে তুলে রাখা পিঠের দিকেই কনকলতা দেবীর চোখ দুটি যাচ্ছিল আর চোখের জল বাগ মানছিল না ।

1 comment:

  1. ধন্যবাদ সম্পাদক মন্ডলীকে

    ReplyDelete