Friday 10 March 2017

বসন্ত বিষয়ক গদ্য .................................................................................................................................................................................


পাতিকাক ও বসন্তের গল্প
--চমক



যে জানালাটার পাশে ছোটবেলায় পড়তে বসতাম, তার পাশেই ছিল একটা ঝাকড়া নিমগাছ। মাঝে মাঝেই একটা কাক করুণ স্বরে ডেকে উঠতো মগডালের বাসা থেকে। আমিও কেসি নাগের উপপাদ্য, পিকে দে সরকারের গ্রামার, সিআরডিজি’র আলো ফেলে তাকিয়ে থাকতাম ওর দিকে। সামান্য একটা কাক, পাতিকাক, কিন্তু কী করুন এক আর্তি ছিল সেই ডাকে। একটা হাহাকার ছিল—যা উথাল পাথাল করে দিত আমার পড়াশুনো। সেই হাহাকারের কারণ খুঁজে পাইনি তখন। সেই কাকের নাম পাতিকাক কেন হয়েছে জানি না। হয়তো কাকের সংসারে ‘পাতি’ বা গুরুত্বহীন বলেই হয়তো এই নাম। দাঁড়কাকের গুরুত্ব বা ওজন নিশ্চয় বেশি ছিল। তার স্বরের গভীরতা থেকেই তা আন্দাজ করা যেত। ছোটবেলায় আমি কখনও কোকিল দেখিনি। দেখলেও হয়তো চিনতে পারিনি, দাঁড়কাক ভেবেই হয়তো ভুল করেছি। কিন্তু শীত শেষ হতে না হতেই তার কুহকিনী ডাক বহু শুনেছি। নব্বই দশকের শেষে আমাদের মফস্বল হতে চাওয়া গ্রামটায় প্রচুর গাছপালা ছিল। সেই সব গাছের মাঝে কোথা থেকে কোকিলের কুহকিনী সুর ভেসে আসতো বুঝতেই পারতাম না। পাতিকাকের কান্না শুনে জানলা দিয়ে তাকাতেই নিমগাছের মগডালে দিব্যি ওকে দেখতে পেতাম। কিন্তু কিছুতেই কোকিলকে দেখা যেত না।
আরো ছোটবেলায় থাকতাম কলকাতার একদম দক্ষিণপ্রান্তে। আমার মা আর অবিবাহিত পিসিদের দারুন সিনেমা দেখার নেশা ছিল। সুযোগ পেলেই তারা পাড়ার কিছু বন্ধুবান্ধবদের সাথে দলবেঁধে আসেপাশের পদ্মশ্রী, বান্টি বা মহুয়ায় ম্যাটিনি বা ইভিনিং শো দেখতে চলে যেত। আর সুযোগ না হলে? কুছ পরোয়া নেহি! বাড়িতে তো নতুন সোনোডাইন টিভি আছেই। তখন টিভিতে একটাই চ্যানেল—দূরদর্শন। তাও ঘড়ি ধরে টেলিকাস্ট, বাকি সময় ঝিরঝির। প্রতি শনি-রবিবার বিকেলে সিনেমা দেখাতো সেই চ্যানেলে। পাগলা খাবি কি! এই সুযোগ কেউ ছাড়ে। দল বেঁধে বসে পড়ত সবাই। এখনকার মতো বাড়িতে বাড়িতে টিভির চল ছিলো না তখন। পাড়াতে একটা বা দুটো বাড়িতেই তখন টিভি। রবিবার আমাদের বাড়িতে পুরো পাড়া ভেঙে পড়তো। সকালে বিআর চোপড়ার মহাভারত আর বিকেলে সিনেমা। এমনই এক বিকেলবেলা মা-পিসিদের পাশে বসে প্রথম দেখেছিলাম—বসন্ত বিলাপ। অত ছোট বয়েসে কী বুঝেছিলাম জানিনা, কিন্তু মনে আছে পাড়ার চন্দনা পিসি, লাল্টু কাকাদের সাথে বসে দারুন হেসেছিলাম। তারপর থেকে আজও টিভিতে বসন্ত বিলাপ দিলেই আমি কাজ সেরে বসে পড়ি। যতবার দেখি ততবার বসন্তের প্রেমে পড়ি আমি। আর ওই গানটা—ও শ্যাম যখন তখন, খেলো না খেলা অমন ... আমি বার বার মুগ্ধ হই। মনে হয় সত্যি আমরা খেলাটায় ধরা দেওয়ার জন্য বসেই থাকি। আমাদের সাহিত্য সভায় বহুবার বন্ধুপত্নী দোয়েলের কাছে এই গানটা শোনানোর বায়না করেছি। বেচারা হয়ত আমার করুন মুখটা দেখেই প্রতিবার শুনিয়েছে গানটা।
যেহেতু বাড়িতে সিনেমার চর্চা ছিলই তাই আমার পেকে উঠতে বেশি সময় লাগেনি। প্রতি সপ্তাহেই সিনেমা দেখা প্রায় অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তখনই লোকটার দেখা পাই। দুস্টু লোক, লাল জল খায়, মেয়েদের আঁচল ধরে হাসতে হাসতে টানে আর গালে বসন্তের দাগ। তখনো ‘শকুনি’ দেখিনি, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়কে এভাবেই চিনেছিলাম। তখন আমার কাছে বসন্তের দাগ মানেই ভিলেন, দুস্টু লোক।
একটু বড় হওয়ার পর আমরা কলকাতা ছেড়ে এই জেলা শহরটায় চলে আসি। জানালার ধারে পড়তে বসি। আর দেখতে থাকি ওই পাতিকাকটাকে। সেই সময় আমার কাছে শীত পেড়িয়ে বসন্ত আসতো পড়াশুনোর সময় বৃদ্ধি নিয়ে। সামনেই অ্যানুয়াল পরিক্ষা। ফলে পলাশ ফুটলো কি ফুটলো না, বাতাসে প্রেম বহিল কি বহিল না, দেখার সময় নেই। স্টেজে মেকাপ দেওয়ার যাতনায় হুমড়ি খেয়ে পড়া বইয়ের উপর। তখন জানলা দিয়ে পাতিকাকটাকেও দেখা বন্ধ। হয়ত সেই সময় পাতিকাকটা আমার দিকে চেয়ে থাকতো। বাড়িতে নাম-কা-ওয়াস্তে সরস্বতী পুজো হলেও আমি কখনো অঞ্জলি দিইনি। কেউ দেওয়ার জন্য জোরও করেনি। সরস্বতী পুজো যদি বসন্তের ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ হয়ে থাকে তবে আমি ইন্ডিয়া, শুধু টিভিতে খেলা দেখে বিশেষজ্ঞের মতামত দিই, খেলতে পারিনা। আমাদের শহরটায় সরস্বতী পুজো বিখ্যাত হলেও আমার দেখা হয়নি ওই পরিক্ষার জ্বালায়। ঠিক একই কারনে হোলি আমার কাছে ছিল, খেলবো হোলি রং দেবো না টাইপ। সবচেয়ে মজা হতো রং খেলার পরের দিনগুলোর স্কুলে। প্রায় কারোরই গা থেকে রং উঠতো না। সেই সব লালমুখো, বাঁদুড়ে রঙা ছেলেরা মারাত্মক সিরিয়াস হয়ে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ লিখত পরীক্ষার হলে। পুজো, হোলি, পরীক্ষা মিটে গেলেও বসন্ত থাকতো আর আমাদের শুরু হয়ে যেত ক্রিকেট খেলা। গোঁফ ওঠা আর গলা ভাঙার সময়টা বসন্তকে কখনোই সিরিয়াসলি নিইনি। একবারই নিতে হয়েছিল। ক্লাস এইটে অ্যানুয়াল পরিক্ষার পরই আমায় অ্যাটাক করলো গুটি বসন্ত। দিনের পর দিন মশারির ভিতর পড়ে থাকা আর নিমের ডাল দিয়ে শরীরে বোলানো। সকলের আমার ঘরে আসতে মানা, এক্সেপ্ট ফেলুদা আর টিনটিন। এই রোগটার নাম চিকেন পক্স কে দিয়েছে কে জানে! তবে রীতিমত মুরগি হয়েই ভাবতাম বন্ধুরা কেমন ব্যাট বল নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। আমি শুয়ে শুয়ে শুনতাম লুকোনো কোকিলের ডাক আর পাতিকাকটার কান্না।
পাড়ায় যদিও কাকু-কাকিমাদের দলটা দোল খেলত। মদ, সিদ্ধি ছাড়া একেবারে নিষ্পাপ দোল। আবিরে আবিরে ভরে যেত আমাদের মোরাম ফেলা গলিটা। আর দোল খেলার পর প্রতি বাড়ি থেকে কিছু না কিছু খাবার। কেউ খাওয়াতো ঘুঘনি তো কেউ বাতাসা। রং না খেললেও আমার ভাগ বাদ যেত না, ঠিক পৌঁছে যেত বাড়িতে। একবার দোল খেলার পর কুয়োতলায় মা স্নান করছে। গলার হারটা খুলে রেখেছে পাঁচিলের উপর সাবান মাখার আগে। স্নান শেষের পর দেখে হারটা নেই। উধাও। খুব প্রিয় ছিল হারটা মায়ের। আমার ঠাকুমা মারা যাওয়ার আগে মা’কে দিয়ে গিয়েছিলেন ভরিখানেকের সেই হারটা। শ্বাশুড়ির শেষ স্মৃতি ফেরত পাওয়ার জন্য সমস্ত বাড়ি উথাল পাথাল করেছিল মা। এমনকি কুয়োতেও কাঁটা নামানো হয়েছিল। পাওয়া যায়নি।
ক্লাস নাইনেই বসন্ত আমাকে অনেকটা বড় করে দিলো। গুলি মারো অ্যানুয়াল পরিক্ষার। ক্লাস নাইন মানে স্কুলের সরস্বতী পুজোর দায়িত্বে। আরও পরিস্কার করে বললে, পাশের গার্লস স্কুলে নিমন্ত্রণের চিঠি দেওয়ার অছিলায় ঢোকার পারমিট। যে বন্ধ গেটের ওপার থেকে লেডিবার্ডে একের পর এক পরিরা বেড়িয়ে আসে, আমাদের ভুভুক্ষু চোখকে সাইডে রেখে উড়ে যায় হেথা হোথা—সেই গেটের ওপারের ঐশ্বর্য দেখার সুবর্ণ সুযোগ।
উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর সকলেরই ল্যাজ গজায় কম বেশি। আমারও কিছু কম গজালো না। কলেজে পড়ার সময়েই নাটকের দলে চোখে চোখ। ভালো লাগা আর ‘ভালোবাসি’ বলে ফেলার মাঝে যে বুক ধুকুপুকু তা যে অংক পরীক্ষার আগের দিনের টেনশনের সাথে তুলনীয় তা কে না জানে। এখনকার মতো ফেবু, হোয়্যাটস্যাপের সুযোগ থাকলে তো কথাই ছিল না। তখন প্রাইভেট পড়ার ব্যাচেও মেয়েরা আলাদা সারিতেই বসতো। অনেকগুলি কাছে যাওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা টপকে প্রেম নিবেদন করাটা সহজ কাজ ছিল না মোটেই। তবে পরিবেশ হয়তো সবকিছুই সরল করে দেয়। ‘ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল’ বলে আমরা ঠিক নেমে পড়লাম বসন্তোৎসবে। গান নাচ আবৃত্তির ফাঁকে ফাঁকে চলল আবির খেলা, আমাদের নাটকের ক্লাসে। আর সেই ভিড়ের মাঝেও আমি সুযোগ পেয়ে গেলাম মুঠোভর্তি আবির তার গালে মাখানোর। কী পেলব সেই গাল! হলুদ, সবুজ, লালে ভরা সেই মুখ আমার আবির মেখে আরো সলজ্জ হলো আর আমি জানিনা কীভাবে বলে ফেললাম—ভালোবাসি। তার চকিত দৃষ্টি আর নামিয়ে নেওয়া চোখে লেখা ছিল সহমতের প্রতিশ্রুতি। ব্যস, পাড়ার লাইট পোস্টে বাঁধা চোঙে রবি ঠাকুরের পাশাপাশি দিব্যি চলতে লাগলো ‘এসেছে হোলি এসেছে’ বা ‘রং বরসে’। সেই আবির রাঙানো মুখের দিকে কয়েক মিনিট তাকাতে পেরেছিলাম; তারপর একটা হারকিউলিস আর একটা লেডিবার্ডের চাকা ঘুরেছিল পাশাপাশি। আমি পড়ে গেলাম—প্রেমে। ফেলে দিলো একটা বসন্তই। সেবারই প্রথম দেখলাম মাঠের পাশের কৃষ্ণচূড়াটা লালে লাল। লজ্জার রংও কি লাল? নইলে সেই অত আবির মাখানোর পরও ‘ভালোবাসি’ শুনে সেই মুখে লালের আভা এলো কী করে!
প্রেমে পড়ার পর বসন্তকে চিনতে ভুল হয়নি। কারণ ফি সরস্বতী পুজোয় তাকে নিয়ে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরার কথা কোকিলটা ঠিক মনে করে দিত। প্রেমে পড়ার পর হাতখরচের টাকা বাঁচিয়ে রাখতে হতো ভ্যালেন্সটাইন ডে’র গিফটের জন্য, সেও প্রতি বসন্তেই। বছরের পর বছর বসন্ত শুধু প্রেমের উদ্‌যাপন করে গিয়েছে দুটো হৃদয়ের মাঝে, হারকিউলিস আর লেডিবার্ডের মাঝে।
কলেজে পড়তে পড়তে আমি যখন অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছি, একা একটা সিগারেট ফুঁকে দিতে পারি, কলকাতা চষে বেড়াই; তখন বসন্ত এসেছিল পর্দার আড়ালে। প্রেমিকাকে নিয়ে আমার মাসিক প্রেমের ডেস্টিনেশন—বসন্ত কেবিন। দুটো কোল্ড ড্রিংক্স আর এক প্লেট মোমো’র বদলে ভারী পর্দা টেনে দিলেই ঘরের ভিতরে ঘর, পাক্কা এক ঘন্টার জন্য। একটা এক ফুট চওড়া টেবিল আর একটা লো বেঞ্চের মাঝে কোনো রকমে দুজনের বসার জায়গা। উত্তপ্ত নিশ্বাস সেসব খামতি কখনো গায়ে মাখেনি। প্লাইয়ের দেওয়ালের ওপাশের কেবিনটায় হয়তো খদ্দেরের সাথে কোনো বেশ্যার বোঝাপড়া। আমি তখন সেই আবির মাখানো পেলব গালদুটোর ঠিক নিচে খুঁজে নিচ্ছি নরম এক জোড়া ঠোঁট, যার নোনতা স্বাদ আমার রক্তের উষ্ণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ওর সবটুকু লিপস্টিক খেয়ে নেওয়ার মতো গোপন যায়গাটুকু বিক্রি করে দিত বসন্ত কেবিন। ডবল দামের গরম মোমো’র ধোঁয়ার দিব্যি, ভোলা যায়না বসন্তকে, বসন্ত কেবিনকে।
“বেকার ছেলে প্রেম করে আর পদ্য লেখে হাজার হাজার
এমন প্রবাদ হেব্বি প্রাচীন অরণ্যে
কিন্তু তার আড়ালের খবর? জবরদখল? দখলজবর?
হাজারবার মরার আগে মরণ নেই”।
শ্রীজাত’র এই কবিতাটা যখন বই হয়ে বের হয়েছিল, তখনই শুনিয়েছিলাম ওকে। সেই সময় আমার বেকারত্ব আর নিকোটিনে ভরা হৃদয় দিব্যি বুঝতে পারছিল, কোথায় যেন সব লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে। প্রেম যতটা না হচ্ছে, ঝগড়া হচ্ছে তার ডবল। ছয় বছরের সম্পর্ক বুঝতে পারছিল ওর বাড়িতে বিয়ের চাপটা আমার ছ্যাচড়া কবিতাগুলো নিতে পারছে না। বেকার প্রেমিক যতই ভালো চুমু খাক, বিয়ের মার্কেটে এখনো সরকারী কর্মচারীরাই যুবরাজ সিংহ, বিয়ে-আইপিএল নিলামে সর্বোচ্চ দর। তাই জবরদখল আর দখলজবরের লড়াই জারি। প্রতি রবিবারের দেখা করার প্রোগ্রাম বাদ দিয়ে আমি যেতাম পরিক্ষার সেন্টারগুলোতে। একটা গ্রুপ ডি’র চাকরিও জবরদখলটা পাকা করে দিতে পারে যে। কবিতার খাতাগুলো ভর্তি হতে থাকলো জিআই আর জিকে’র প্রশ্নোত্তরে।
এক রবিবারে পিএসসি দিয়ে ফেরার পথে দেখা হয়ে গেল। মোরের মাথায় ফুচকা খাচ্ছে ও, সাথে আর একজন। সেও এক শেষ বসন্তের বিকেলবেলা। পরে বন্ধুদের কাছে খবর নিয়ে জানতে পারলাম, বিয়েটা ঠিক, পাত্র সরকারী চাকুরে। বুঝতে পারলাম, জবরদখল আর দখলজবরের লড়াইয়ে সামান্য হেরো পার্টি হয়েই রয়ে গেলাম। পড়ার ঘরে জানলা দিয়ে ঝাপসা চোখে তাকাতে তাকাতে আবার শুনতে পেলাম কাকটার ডাক। এত বছর পর বুঝতে পারলাম, কাকটা কাঁদছে, প্রতারিত হয়ে। কোকিল, যার মোহমহী স্বরে মুগ্ধ হই আমরা, প্রতারণা করে গেছে কাকটাকে, প্রতারণা করে যায় বারবার, প্রতিবার বসন্তের শেষেই।
একযুগ পরে আমি এখন বসন্ত উদ্‌যাপন করি শান্তিনিকেতনের রিসর্টে। দাঁড়কাককে এখন আর খুঁজে পাওয়া যায়না। আমার মতো পাতিকাকেরাই ভিড় করে এসব যায়গায় আর আঁতেল সাজে। সকালে মেলার মাঠে বসন্তোৎসব আর রাতে হুইস্কি। সাউন্ড সিস্টেমে ‘লংগা ইলাইচি কা’ আর ফেবুতে হলুদ পাঞ্জাবীতে সেলফি। সারা বসন্তোৎসবের মাঠ জুড়ে আমি খুঁজে চলি সেই পেলব গালদুটোকে, যাতে আবির মাখালে লাল হয়ে ওঠে।
বেশ কিছুদিন আগে নিমগাছটাকে কেটে ফেলা হয়েছে। পাশের বাড়িটা দোতলা হবে বলে। পাতিকাকটা আবার ডাকতে শুরু করেছিল করুণ স্বরে। কেউ পাত্তা দেয় টেয়নি। পাতিদের কেই বা কবে পাত্তা দিয়েছে। গাছ কেটে ফেলার পর মাটিতে ছিটকে পড়ে পাতিকাকের বাসা। সেই সময় কোনো ডিম ছিল না বাসায়, কোনো উড়তে না পারা বাচ্চা কাকও ছিল না। তবু উপস্থিত মানুষগুলো হাঁ হয়ে যায়। ভেঙে পড়া বাসার মধ্যে জ্বলজ্বল করছে একটা সোনার হার, আমার মায়ের হারিয়ে যাওয়া।  ‘পাতি’রাও সময়ে সময়ে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়।
পুনশ্চঃ তার বিয়েটা হয়ে যাওয়ার আগেই আমি চাকরি পেয়ে সরকারী আধিকারিক হয়ে যাই। সে ঠিক হওয়া বিয়েটা ভেঙে আমাকেই বিয়ে করতে চেয়েছিল বটে, কিন্তু আমি চাইনি। এ ঘটনাও ঘটেছিল এক বসন্তে।  
 

1 comment: