Friday 10 March 2017


বার্ণিকের গল্প ..........


প্রবাহ
শুভঙ্কর চৌধুরী


তিতাস পর্ব
৯.১.২০১৭ , রাত প্রায় ২ টো
ছেলেটা এখনো ফোন করছে না কেন ? ফেসবুক টা বন্ধ করে  হঠাৎ মনে পড়ল তিতাসের। কাল থেকে ছেলেটা না ফেসবুক না হোয়াটসআপ কিছু তেই অন হয়নি। কোনও ফোনও করেনি। ছেলেটা কেমন যেন বদলে যাচ্ছে দিন দিন । এইসব উল্টো পাল্টা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে তা  নিজেও জানে না তিতাস। সকালে যখন ঘুম ভাঙল তাখন প্রায় ৯ টা ছুঁই ছুঁই । আজ মা মেরেই ফেলবে আমায় । ধরপরিয়ে ঘুম থেকে উঠে  গেল তিতাস। কিন্তু ওর নিজের অবাক লাগলো একটু, মা এখনো কিছু বলছে না কেন ?
দোতলার নিজের ঘড় থেকে নিচে নেমে এসে দেখে মামা এসেছে সকালে,  মামি আর টুটুস কে নিয়ে। টুটুস হল ওর মামাতো ভাই । মহা খচ্চর পুচকে, পুরো টেপ রেকর্ডার। যাই হোক ভগবান এর অসীম কৃপা এই ভেবেই হাঁসতে  হাঁসতে সে নিজের সকালের খাবার টা খেতে বসেই আবার মনে পরে গেলো অরিত্রর কথা।
একটু বিরক্ত করি অরিত্র আর তিতাসের পরিচয় পর্ব টা সেরে নিই। অরিত্র হল আসানসোল এর ছেলে । উচ্চবিত্ত বাঙ্গালী পরিবার এ মানুষ। আসানসোলে স্কুলের পড়াশুনো শেষ করে  কলকাতায় এসে ভর্তি হয়েছে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। আর তিতাস মানে তিতাস ফৌজদার হল সাধারণ ছাপোষা মধ্যবিত্ত পড়িবারের মেয়ে । বেহালায় বাবা মা এর সাথে থাকে। গ্রামের বাড়ি মালদার হরিসচন্দ্রপুরে হলেও সে কোলকাতাতেই মানুষ । বেহালার একটি স্কুলে পড়া শেষ করে  এখন সুরেন্দ্রনাথ কলেজেই ভর্তি হয়েছে একি department এ । মানে ফিজিক্স নিয়ে । এবার গল্পে ফেরা যাক। 
তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট শেষ করে  ঘরে ফিরে দরজা খুলতেই সে দেখে খাটের তল থেকে ওল্ড মঙ্ক এর বোতল টা দাঁত বের করে  হাসছে। তাড়াতাড়ি সেটাকে নিজের ব্যাগের মধ্যে চালন দিয়েই ফোনে টা হাতে নিয়ে কল করল অরিত্র কে । নাহ অফ আসছে ফোনে। কিছুই বুঝতে পারছিলো না ও।
আজকাল অরিত্র এর সাথে কথা না হলে কলেজ এ ওর মুখ একবার না দেখলে তিতাসের কিছুতেই ভালো লাগে না আর। সে তো এই রকম ছিল না আগে কখনো ! মেয়ে হয়ে জন্মেছে আর ছেলেদের নজর এড়িয়ে যাবে এই রকম হয়নি কখনো । কিন্তু কারও জন্যে কোনও অনুভুতি আসেনি ওর মনে আগে। তাহলে এই রকম হচ্ছে কেন ? ধুর ফালতু ভাবনা এইসব বলে আবার সে কলেজের রুটিন টা দেখল । মেরেছে ১২ টা থেকে ক্লাস আর সে এখনো বাড়িতে। নাহ আজ আর চান টা হল না । বই নিয়ে কোনও রাকমে তৈরি  হয়ে সে বাড়ি থেকে বের হল।
কলেজে ঢুকতে গিয়ে শোভন এর সাথে দেখা । “ কিরে অরিত্রর কোনও খবর জানিস নাকি রে ? “ তিতাসে জিজ্ঞাসা করার আগেই শোভন ই জিজ্ঞাসা করে  ফেললো । “ আমি জানলে কি আর এখানে থাকতাম ? “ বিরক্ত হয়েই উত্তর টা দিলো তিতাস। আর কথা বাড়ালো না ওরা।
দুপুর ২.৩০ কলেজ ক্যান্টিন
-আজকের টপিক টা কিছু মাথায় ঢুকলো তোর ? ( রিয়ার কথায় চমকে উঠলো তিতাস)
-কি বলছিস ?
-বলছি আজকের...... এই তোর মনটা কথায় আছে রে ? সকাল থেকে দেখছি কেমন হয়ে আছিস। বলি ব্যাপার টা কি ? প্রেমে পড়লি নাকি ?
-বেফালতু বকিস না তো ! দে সিগারেট টা .. আগুন টা কি তোমার শ্বশুর দেবে ?
একটু চুপ থেকে আবার বলা শুরু করল তিতস
         -হ্যাঁ রে অরিত্রর কোনও খবর জানিস তুই ? কয়েক দিন ধরে কোনও পাত্তাই পাচ্ছি না ওর !
          -কেন তুই জানিস না ও বাড়ি গেছে ?
          -তোর আগে জানি সেটা, কিন্তু তার পর থেকে তো আর পাত্তাই নেই মালের!
          -এখন তবুও একটু শুধরেছিল ভেবেছিলাম । নাহ। ও শুধরনোর পাবলিক না।
          -এই রকম বলিস না রে !! ( নিজের অজান্তেই সুর নামিয়ে কথা টা বলল তিতাস )
          -কি ??????????? ( প্রায় অবাক হয়ে আকাশ থেকে পড়ল এমন করে  চিৎকার করে  বলল রিয়া)
          -না মানে আর কি ওই বলছিলাম যে!!!!  ছাড় , তো চল ক্লাস আছে ।
          -এই তুই ঠিক আছিস তো ? নাহ পড়াশুনোর কথা বলছিস তুই !
          -না পড়লে অরিত্র খুব রাগ করে ।
আর কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়ল ওরা।
অরিত্র পর্ব
৭.১.২০১৭, সকাল ৯.৪৫
            -বাবু কখন আসছিস বাড়িতে ?
           -এই তো বেরবো এবার। তুমি কি এসে গেছো ?
           -হ্যাঁ তুই আয় না । একটু দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে তোকে !
           -মা বলছি যে উকিলের সাথে কথা হয়েছে তোমার ?
           -তুই আয় বাড়িতে সব বলছি তোকে। কখন বেরবি রুম থেকে ?
           -এই তো বেরবো ।
           -বাসেই আসছিস তো ?
           -হুম। এবার বেরবো। রাখছি ।
ফোন টা কেটে নিজের ব্যাগ গোছাতে লাগলো আরিত্র। আজকাল আর সে কাউকে কিছু বলেনা। তার জীবনের যত অগোছালো সবকিছু সে নিজের মধ্যেই রাখতে চায় আজকাল।  আজ বাড়ি যেতে হবে ভেবেই গা গুলিয়ে আসছে তার। “বাড়ি” এই কথা টাই আজকাল তার কাছে হাস্যকর ব্যাথার মতন। ফোনে টা বাজছে,  দেখল তিতাস ফোন করেছে।
-হ্যালো বল ।
-কিরে আজ আসছিস তো?
-ভুলে গেছিস নির্ঘাত । আজ বাড়িতে যাচ্ছি তোকে বলেছিলাম তো !
-ইসস। ভুলে গেছিলাম রে । কবে ফিরবি ?
-আজকাল রত্রে একটু বেশীই খাচ্ছিস মনে হচ্ছে ।
-বেশী পিঁয়াজি না করে  বলনা ।
-দেখি কিছু কাজ আছে , কয়দিন লাগে দেখি। রাখছি বেরবো এখন।
কথা বলতে আর ভালো লাগছিলো না অরিত্রর । এখন সামনে এক অসমো সংগ্রাম আছে তার ।
বিকেল ৪.১০ , ধর্মতলা বাস স্ট্যান্ড
বাস এর সিটে বসে ইয়ার প্লাগ টা কানে লাগালো অরিত্র । আর ভাবতে ভালো লাগছে না কিছু ওর। সেই ছোট্ট থেকে দেখে আসছে সে মা আর বাবার মধ্যে ঝামেলা । আর ভালো লাগছে না তার কিছুই। মোবাইল টা খুলে সে গান চালালো “I'm so tired of being here,Suppressed by all my childish fears And if you have to leave-I wish that you would just leave 'Cause your presence still lingers here And it won't leave me alone” . এটা ওর সবচেয়ে প্রিয় গান। ওর একার বেঁচে থাকার গান।
বাস চলতে শুরু করেছে। নবান্ন পার করলো সবে। গান শুনতে শুনতে আবার ও হারিয়ে গেলো নিজের মধ্যে। সেই ছোট্ট বেলায় দেখত বাবা প্রচুর মদ খেয়ে এসে মা কে মারছে । উচ্চবিত্ত পরিবার হওয়ায় বাইরের লোকে কিছুই টের পেত না। খালি দেখত ওর মা তবুও বাবা কে অক্লান্ত ভাবে ঠিক করতে চাইছে। এখন ওর বয়স ১৮, এত বড় হবার পরেও তার পরিবারের অবস্থা একি থেকে গেছে । ছোট্ট বেলাতেই ওর মা হয়তো বুঝতে পেরেছিল তাই আসানসোলে দাদুর কাছেই মানুষ হয়েছে ও। বাবা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি তে বড় পদে চাকরি করায় কখনো বাড়িতে থাকতেন না বেশী। মা ও থাকতো ওর সাথেই। বাবা যখনি আসত সারক্ষন মদে ডুবে থাকতো। অরিত্রর কিছুই ভালো লাগত না । স্কুলে দেখত সবার বাবা মা আসত তাদের কত্ত আদর করত, কত্ত ঘুরতে নিয়ে যেত কিন্তু অরিত্র বুঝেছিল তার  কপালে এইসব কিছু নেই । এই নিয়েই সে বড় হয়েছে । কোনও বন্ধু সে ইচ্ছে করেই করেনি কারন তাদের নিজের বাড়িতে সে কখনই আনতে পারত না । পড়াশুনো তে ভালই  সে, আর ইংরেজি মিডিয়াম এ পড়ার সুবাদে অনেক ছোট্ট বেলা থেকেই মেয়েদের মধ্যে সে ছিল অনেক বেশী চর্চার বিষয়। ভালবসা নামক খেলাটিতে সে ক্লাস ৯ থেকেই মেতে উঠেছিল। খানিকটা নিজের নির্জনতা দূর করার জন্যেই। কিন্তু ভালোবাসার ইনফ্যাচুয়েসনে সে অনেক শরীর পেয়েছে। ভালোবাসার জায়গা টা পায়নি আজও ।  আচ্ছা তার কি সুখে থাকার কোনও অধিকার নেই ? কেন সে বাবা মা এর ভালোবাসা পেল না ? তাহলে কেনই বা জন্ম দিলো ওকে তারা ? হঠাৎ বাসের ব্রেক এর জোরে সে নড়ে উঠলো । দেখল পানাগর এসেগেছে। এ.সি বাস এর সুবাদে বাইরের আওয়াজ কানে আসেনা। সে ভাবছে জীবন টাকে যদি সে একটা এ.সি ঘরে বন্ধ করে  রাখতে পারত , তাহলে সব কিছু থেকে সে দূরে একা বাঁচতে পারত নিজের মতন করে ।
নিচে নামলো । বাস এখানে থামবে কিছুক্ষন । নেমেই একটা সিগারেট ধরাল সে। হঠাৎ ফোন টা বেজে ওঠায় বিরক্ত হয়েই দেখল ।
-হ্যাঁ বলো !
-কতদূর ?
-পানাগর
-জল খেয়েছিস ?
-হুম
-খিদে পেলে কিছু খেয়েনিস ।
-আচ্ছা ।
-দাদুভাই তুই আমায় কিন্তু ভুল বুঝিস না । প্লিস
বুকের ভেতর টা কেমন করে  উঠল অরিত্রর। দাদুর মুখে এইরকম কথা সে কখনো শোনেনি
-এই ভাবে বোলো না দাদুন। আমি তোমায় না কাওকেই ভুল বুঝিনি ।
-আচ্ছা , তুই রাতে কি খাবি বল। আনিয়ে রাখতে হবে তো।
-আমি যাচ্ছি গিয়ে কথা বলছি। এখন রাখছি।
বাস ছেড়ে দিলো। সে আবার নিজের মধ্যে হারিয়ে গেলো। হঠাৎ একটা মেয়েলী গলায় তার হুঁশ ফিরলো ।
-hey Ari how are u ?
চোখ খুলে দেখলো সিল্ভিয়া দাড়িয়ে আছে সিট ধরে। দেখেই গা ঘিনঘিন করে  উঠলো অরিত্রর। অনিচ্ছা সত্যেও জবাব দিলো 
-hey !! m fine .
-so !! its been a long haan ?
-may be !
-you know what !
-what ?
-I think I steel love you.
নিজেই মুখ টা ঘুরিয়ে নিল বাইরের দিকে অরিত্র । আজকাল এই love কথাটা আর নিতে পারে না ও। তাছাড়া সিল্ভিয়া কেও ওর আর ভালো লাগছিলো না । ভাগ্য ভালো ওইটুকু বলেই থেমে গেলো সিল্ভিয়া। দিয়ে কিছুক্ষণ অরিত্রর দিকে তাকিয়ে থেকে সে কিছু বলছে না দেখে চলে গেলো ।
রাত ৯ টা , অরিত্রর বাড়ি
-বাবু তুই কিছু বুঝতে পারছিস ?
-কি ব্যাপারে বলতো ?
-এই যে তোর বাবা আর আমার এই ডিভোর্স এর কথা তার ব্যাপারে ?
-আমি আজ অবধি কিছু বলেছি তোমাদের ? যা করছ নিশ্চয়ই কিছু ভালো ভেবেই করছ।
-তবুও তোর একটা মতামত তো থাকেই।
-না ।
-না কেন ?
-কারন আমি দাদু কে চিনি , যিনি আমায় মানুষ করেছেন। তোমায় চিনি যিনি আমায় জন্ম দিয়েছো। বাবার উপাধি আমার আছে শুধু। আর কিছু তো নেই আমার ।
-এই ভাবে বলিস না বাবু। আমি কি তোকে কিছুই দিইনি বল ? আমি কি তোকে ভালবাসিনা ? ছেলে বেলা থেকে তুই তো সব ই দেখেছিস নিজের চোখে । আমার কিই বা করার ছিল বল ? তুই বল বাবু আমি কি করতে পারতাম ? তোর দাদু অসুস্থ, আমি একা তোকে মানুষ করছি তোর দাদু কে দেখছি, তোর বাবা কে আজ অবধি ঠিক করার চেষ্টা করে  গেলাম । জানিস তোর বাবার জন্যে কোনও কাজের মাসি থাকতে চাইত না বাড়িতে ? তা সত্যেও আমি সব কিছু সামলে তোকে আলাদা করে  মানুষ করেছি যাতে তোর বাবার কোনও ছায়া না লাগে তোর ওপর । এটা কি আমার কোনও দোষ ?
একদমে বলেগেলেন স্মিতা দেবী কথা গুলো । অরিত্র লক্ষ্য করল মা এর চোখে জল এসেছে। আগে এই জিনিস কখনো দেখেনি সে। আর যাই হোক তার মা এর চোখে জল দেখেনি কখনো সে।
-মা ! ও মা ! শোনো না , আমার না পায়েস খেতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব। খাওয়াবে তুমি ?
আর কাঁদতে পারলেন না স্মিতা দেবী । জড়িয়ে ধরলেন অরিত্র কে । দিয়ে অনেক গুলো চুমু খেলেন অরিত্রর গালে আর কপালে। দাদু এতক্ষন দরজার আড়াল থেকে সব শুনছিলেন। এবার বাইরে বেরিয়ে এসে একটু আদোআদো গলা করে  বললেন
-মা রে বলছি কি পায়েসের ভাগ টা কি এই বুড়ো একটু পাবে ?
-অবশ্যই দাদুন। আমি আর তুমি । দাদু নাতি মিলে খাবো। মা কে একটুও দেব না কিন্তু ।
অনেক কষ্টের মাঝেও একটু হাসির গন্ধে সারা বাড়িটা কেমন উত্তেজিত হয়ে উঠল আবার ।
কলেজ পর্ব-
১৯.১.২০১৭, দুপুর ১২টা
-এই অরিত্র আজ ক্লাসে এলনা কেন রে ? ( ফিস ফিস করে বলল রিমা  তিতাস কে )
-আমি কি ওর বিপ নাকি যে ওর সব খবর রাখব ? চুপচাপ ক্লাস টা করতে দে। লাস্ট প্রাক্টিক্যাল ক্লাসে আসবে ।
বিকেল ৩.২০ , প্রাক্টিক্যাল ল্যাব
-কোথায় ছিলি রে এতদিন ?
রিমার কথা শুনে ওর দিকে তাকালো অরিত্র।
-বাড়ি গেছিলাম । বলেছিলাম তো
-হ্যাঁ । তা বলেছিলেন কিন্তু তার সাথে এটাও বলা দরকার ছিল যে আপনি বাড়ি গিয়ে কারও সাথে কথা বলতে চান না । তাহলেই হত । বার বার ফোন করে নিজে দের আর ব্যাস্ত করতাম না আমরা।
এতক্ষন শুনছিল তিতাস সব কিছু। এবার বললো,
-দ্যাখ রিমা  যে মানুষ শুধু নিজের কথা ভাবে তাকে জ্ঞান দিতে নেই। its better not to talk abut it.
অরিত্রর বুঝতে বাকি থাকল না যে কথা টা তাকে বলা হল  । সেও কথা না বাড়িয়ে আবার কাজে মন দিলো ।
বিকেল ৫ টা, কলেজ ছুটি হবার পর
-কিরে কথা বলবি না আমার সাথে ?
-কে আপনি ?
-ওহ !!! বুঝেছি । দেখ তোকে আমার কিছু বলার আছে । যদি সময় হয় চল কথাও গিয়ে একটু বসে কথা বলি তোর সাথে ।
-পারমিসান চাইছিস ? না জানাচ্ছিস ?
-অনুরোধ করছি !!
-সময় নেই , বাড়ি যেতে হবে।
-তুই আবার কবে থেকে টাইম মতন বাড়ি যাওয়া শুরু করলি ?
-আমি কাউকে কৈফিয়ত দেবার জন্যে বাধ্য নই।
-আচ্ছা বুঝেছি। ঠিক আছে ।
অরিত্র আর কথা বাড়ালো না । ফিরে চলে যাচ্ছিল , হঠাৎ পেছন থেকে কলার ধরে একটা টান অনুভব করল জোরে তার পর নিমিষের মধ্যে গালে একটা জোরে চর পড়ল তার।
-তুই কি মানুষ ?
-এটা কেন করলি তুই ? আমার মা আজ অবধি আমার গায়ে হাত তোলেনি !
-বেশ করেছি মেরেছি । দরকার পড়লে তোকে আবার মারব । কিছু করার আছে তোর ? থাকলে করে নে ! এই তিতাস কাওকে ভয় পায় না ! তুই কে রে ? কে তুই ? কি জন্যে এত ভাবি আমি তোকে নিয়ে ? বেশ তো ছিলাম আমি আমার জীবনে । কেন এলি তুই ?
-আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ! ( অবাক হয়ে বললো অরিত্র, কিছুই ঢুকছিলো না ওর মাথায়)
-তা বুঝবি কেন ? আমি তো আর শরীর দিইনি তোকে ! তোরা পুরুষের জাত শালা সব কটা এক, সব কটা শরীর বুঝিস তোরা ! তুই ও তার ব্যাতিক্রম না ।
-দ্যাখ তিতাস আমি সত্যিই কিছু বুঝতে পারছি না , আর কবে আমি তোর শরীর চাইলাম বলতে পারিস ? কোনদিন দেখেছি তোর দিকে সেইভাবে আমি ?
আশেপাশে কিছু লোক ফ্রি তে সিনেমা দেখছিল এতক্ষন। সেটা বুঝতে পেরে তিতাস হঠাৎ বলে উঠল “ এই যে দাদারা বৌদিরা এবার মুভি শেষ হয়েছে, আস্তে পারেন আপনারা “
-চল কোথায় যাবি বলছিলিস তুই !
-না থাক আজ।
-আবার খাবি ?
বলতেই কাজ হয়ে গেলো । অরিত্র জানে না কোন জাদুতে কাজ করল আজ । ওরা কলেজ স্কয়ারে বসল একটা বেঞ্চি তে।
-হুম বল কি বলবি বলছিলি তুই ।
-তুই আমার ব্যাপারে কতটুকু জানিস বল ?
-তুই একটা ছেলে ! যদিও সন্দেহ হয় তবুও । আমার সাথে পড়িস। প্রথম ভাবতাম এত হ্যান্ডসাম ছেলে নিশ্চয়ই অনেক সখী থাকবে আর আমাদের মতন বয় কাট মেয়ে দের পাত্তা দিবি না । কিন্তু পরে জানলাম তুই নেহাতই গোবর গণেশ ছাড়া আর কিছু না ।
-আর ?
-আর কিছু না । এত ভাটাচ্ছিস কেন বলত ? যা বলতে চাস সেটা সোজাসুজি বল না ?
-দ্যাখ আমি আজ তোকে কিছু কথা বলব , হয়তো এসব শুনে তুই আমার সাথে আর বন্ধুত্ব নাও রাখতে পারিস । কিন্তু আমার কথা শেষ না হওয়া অবধি তুই টুঁ শব্দ করবি না। জানিনা কেন তোকে এসব বলছি আমি । কিন্তু আমি জানি আমি যদি কাওকে এখন কিছু না বলি তাহলে আমার কাছে সুইসাইড করা ছাড়া আর কিছু পথ থাকবে না । আর নিজের কথা অন্যকে বলা মানে সহানুভূতি পাবার চেষ্টা , আমি সেটা করছি না , কিন্তু তোকে বলছি কারন আমি জানি তুই আমার কথা শুনবি।
এই বলে বলা শুরু করলো অরিত্র , তার ছোট্ট বেলার স্কুলের জীবন থেকে যৌবনের কাম অবধি , বাবা মা এর মারপিট, ডিভোর্স , দাদুর কাছে মানুষ হয়া সব বলল।
ঘড়িতে এখন ৭.৪৫ বাজে। তিতাস বলল “আর কিছু বলবি ?” “না” বলে মুখ নিচু করল আরিত্র। তিতাস উঠে দাঁড়াল। “অনেক রাত হয়ে যাবে আমার পৌছুতে এখন বেরই , পরে কথা হচ্ছে ।“ বলেই হাঁটা দিলো সে। অরিত্র এই প্রথম বার দেখল তিতাস এর শরীর দুলিয়ে হেঁটে চলে যাওয়া কে। খোলা চুলের দুলুনি যেন অজান্তেই মাতাল করে দিচ্ছিল তাকে। অরিত্রও উঠে দাঁড়াল। এবার তাকেও যেতে হবে ।
রাত ২.৫০
আজ রাতে ৫ পেগ খেলো তিতাস তবুও নেশা হচ্ছে না তার। কানে শুধু অরিত্রর কথা গুলো ভাসছে । একটা ছেলে কি করে এত কষ্টে থেকেও হাঁসি মুখে চলতে পারে ? এই কয়মাসে একটুকো বুঝতেই দিলো না ?আজ তাহলে আমায় কেন বলল যে আমায় না বললে ওকে মরতেও হতে পারে ? নাহ এর একটা বিহিত করতেই হবে।
ভণিতা পর্ব
৩১.১.২০১৭ , তিতাসে বাড়ি
সেই দিন টার পরথেকে কিছুতেই ভালমতন কথা আর বলেনি অরিত্র তিতাসের সাথে । হুম আর ওকে দিয়েই কাজ চালিয়েছে বেশিরভাগ । কেন যে ছেলেটা এমন করছে ধুর!!!!!! বই টা ছুড়ে ফেলে দিলো বিছানার ওপর। হঠাৎ ফোনে এল । ওপাস থেকে রিমার গলা
-শোনো না বান্ধবী কাল কিন্তু ওই কাঞ্জিভরম টা পড়বি ।
-তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি ? এমনিতেই জীবনে আমি শাড়ী পরি না তার ওপর আবার এইসব আবদার ?
-যেটা বলছি সেটা কর। বেশী কথা বললে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম আমি ।
আর কথা বাড়ালো না তিতাস। শুধু ওকে বলে ফোনে টা রেখে দিলো।
১.২.২০১৭ কলেজের মাঠ
- আরিব্বাস এটা কাকে দেখছি ? ( শোভন জিগ্যেস করায় তার দিকে তাকাল তিতাস। দেখে শোভন আর রিমা  হাত ধরে আসছে । বুঝতে আর বাকি থাকে না বাকিটা )
-তলে তলে এইসব কবে হল ?
-(হাঁসতে হাঁসতে উত্তর দিলো রিমা) তোমার বিরহ পর্বে জানু । বলেই আবার হাঁসতে লাগলো সকলে।
-ওই দ্যাখ কে আসছে ।
শোভনের কথা শুনে সবাই পেছন দিকে তাকালো। দেখল অরিত্র একটা হলুদ পাঞ্জাবী   পরে কলেজে ঢুকছে। কি যেন হয়ে গেলো অরিত্র কে দেখে তিতাসের ও নিজেও বুঝতে পারল না । সোজা অরিত্রর কাছে এসে বলল
-দ্যাখ অরিত্র আমি অত নেকুপুসু মেয়ে নই সেটা তুই জানিস খুব ভালো করে !
-আবার শুরু করলি ?
-চুপ !!!!!!! আমি বলব আজ, আর তুই শুনবি। আমি অত নেকুপুসু মেয়ে নই। ভালোবাসা পেলাম না কেন এই বলে দেবদাসী হয়ে জীবন কাটাতে পারবনা । বস তোমায়  ভালোবাসি । এই বিয়ে করবি আমায় ?
-হুম ।
পরিণয় পর্ব-
১.২.২০২৩  অরিত্রর বাড়ি ।
আজ ওদের ফুলশয্যা । রাতে সব কিছু মিটিয়ে অরিত্র যখন ঘরে ঢুকল, দেখে তিতাস খাটে না বসে সোফায় বসে আছে ।
-কিরে ওখানে কি করছিস ?
-দ্যাখ একটা কথা আছে আমার !
-আবার ?
-এই শোন চুপচাপ।
-বল বল । হালকা হাঁসি পেলো আরিত্রর
-আমি কিন্তু তুমি করে বলতে পারব না তোকে।
-আর কিছু ?
-না আর কিছু না ।
কথা শেষ না হতেই অরিত্র জাপটে জড়িয়ে ধরল তিতাস কে ।
-এই কি করছিস কি ?
- For every action, there is an equal and opposite reaction.
বাকি টা নাহয় এবার তিতাস আর অরিত্রর ওপর ছাড়া যাক । ওরা এবার একটু সুখে আর শান্তিতে থাকুক। কামনা করুন অরিত্রর যেন হাত পা না ভাঙ্গে তিতাসের মারের চোটে ।

No comments:

Post a Comment