Friday 10 March 2017

বার্ণিক এর গল্প –
.......................................................................................................................................

একটি সারস্বত কাহিনী
সৌরভ নায়ক




।।স্নিগ্ধা।।
সকালের রোদটা চোখে পড়তেই বিরক্তিতে বিছানাতেই মুখ সরিয়ে নিলো স্নিগ্ধা। মনে পড়লো কালই সেই সরস্বতী পূজা।  গত বছরের সরস্বতীপূজা থেকে এবারের বছর টাও ঘুরে এলো, কিন্তু এই একটা বছরে জীবন অনেকটাই বদলে গেছে স্নিগ্ধার।  গতবছর এই রকমই সরস্বতীপূজা ছিল। পূজোতে বেরিয়েছিল সে। তখনও জানত না একটু পরেই যা ঘটতে চলেছে তা তার জীবন টাই বদলে দেবে।
 এলাকার ত্রাস কানা দিলিপের ভাই ছোট্টু  ছিনে জোঁকের মত পিছনে পড়ে ছিল। রাতদিন ফলো করতো। হিন্দি ভিলেনের স্টাইলে হুমকি দিতো। তবে স্নিগ্ধা এতে বিশেষ বিচলিত হতো না।
           ওদের পাড়াতেই থাকতো তীর্থ। বরাবরের মুখচোরা লাজুক। আর্ট কলেজের ছাত্র। গত বারের সরস্বতীপূজার আগে সাহস করে স্নিগ্ধা কে এসে বলেছিল
-একটা কথা বলতাম,যদি কিছু মনে না করো
-কি বলো
-না মানে, বলছিলাম
-উফফ বলবে
- মানে আমি তোমায় খুব ভালোবাসি। প্লিজ কিছু মনে কোরো না
মনে মনে খুব খুশী ও হাসি দুটোয় হচ্ছিল স্নিগ্ধার।  পাগল টা এতদিনে বলার সাহস পেলো তাহলে।
স্নিগ্ধা গম্ভীর হয়ে ছিল। তীর্থ বলে উঠল
-কি হলো, কিছু বললে না
-পরশু সকাল ১০ টায় ওমেন্স কলেজের সামনে দাঁড়িও।যা বলার তখন ই বলবো না হয়
শো রিলের থেকেও বেশী ঘটনা ঘটছে তারপর। একবুক তাজাবাতাস আর একমুখ হাসি নিয়ে পূজোর দিন বেরিয়েছিল। স্নিগ্ধা জানত একটা পাগল উদ্বিগ্ন হয়ে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে। মায়ের শাড়ী তে সুন্দর করে সেজেছিল সে। কিন্তু গোধূলি মোড় পেরোতেই ছোট্টু পথ আটকে দাঁড়ায়
-আমার কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে
-এই নিয়ে কতবার তোমায় বলেছি ছোট্টু দা।আমি তোমাকে ভাল বাসিনা বাসিনা বাসিনা।কেন জ্বালাচ্ছো আমায়
ছোট্টু বোধহয় নেশাটেসা  করে ছিল। হিসহিসে গলায় বলে উঠলো
-তবে রে খানকি মাগি। বহুত দেমাগ না তোর। তোর রস আজ বের করছি।  এই বলে মুখে কি একটা ছুঁড়ে মারে।
তরল টা মুখে পড়তেই স্নিগ্ধার মুখে যেন একশ বিছে কামড়ে ধরে। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে ওখানেই জ্ঞান হারায় সে।  অজ্ঞান হবার আগে কি একবার তীর্থকে দেখতে চেয়েছিল সে? কে জানে

।তীর্থ।
 সেদিন কলেজ গেটে বিকেল চারটে অব্দি দাঁড়িয়ে থেকেও স্নিগ্ধার দেখা পায়নি তীর্থ। ক্লাবে ফিরতেই মারাত্মক ঘটনাটা শুনলো। মোড়ের মাথায় স্নিগ্ধার ওপর অ্যাসিড ছুঁড়ে মেরেছে কেউ।স্নিগ্ধা সিরিয়াস অবস্থায়icu তে ভর্তি। চোখের সামনে সমস্ত শহর যেন হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ছিল সেদিন। আজও তীর্থ সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে বেরোতে পারেনি। প্রায় টানা ছমাস দিল্লী মুম্বাই এ চিকিৎসা চলে স্নিগ্ধার। বারবার প্লাস্টিক সারজারি। বাঁচার আশা খুব কম ছিল কিন্তু স্নিগ্ধা বেঁচে ফিরে। তীর্থ এরপর বারবার স্নিগ্ধার সাথে দেখা করতে গেছে। কিন্তু স্নিগ্ধা তাকে বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে, কথা বলতে চায়নি। ওর মা ও বলেছে "বাবা তুমি এলেই মেয়েটার মুখে একটু হাসি ফোটে, আমি দেখেছি, তবু জানিনা কেন ও তোমার সাথে দেখা করতে চায় না
   একা সিগারেট ধরিয়ে এই সব পুরোনো কথা ভাবছিল তীর্থ। তার সব স্বপ্ন এভাবে শেষ হয়ে গেলো? পেছন থেকে সম্বিত ডাকলো
- কি রে কি ভাবছিস
-না কিছু না
-স্নিগ্ধা তাই না
-ধুৎ,
-যাই হোক, এবারের পাড়ার সরস্বতী ঠাকুর তুই গড়ছিস, তাই না। 
-হুম
-হয়ে গেছে
-কাল মণ্ডপেই দেখিস।আপাতত বাড়ি যাই
।স্নিগ্ধা।
তীর্থর জন্য বড্ড মন কেমন করে।  কিন্তু ও চায়না এই পোড়া মুখ নিয়ে তীর্থর সামনে দাঁড়াতে। তাই তীর্থ বারবার ছুটে এলেও বুকে পাথর রেখে তাকে ফিরিয়েছে, দরজায় খিল এঁটে কেঁদেছে। কাল সেই সরস্বতীপূজা। অভিশাপের একটি বছর পূর্ণ।  ভালো থেকো তীর্থ, আমকে ভুলে ভালো থেকো
সকালে ছোট বেলার বান্ধবী রিয়ার ধাক্কা তে ঘুম ভাঙ্গলো স্নিগ্ধার,  আগে খুব উঠে উপোষ করত। উত্তেজিত গলায় বলছে
-ওরে দেখ কি কান্ড হয়েছে
-কি হয়েছে?
-শিগগীর  প্যান্ডেলে চ
-কেন রে?
-আহ তুই চল তো। কোনো কথা শুনবো না
মুখে কাপড় ঢেকে স্নিগ্ধা ঘর থেকে বেরোয়।প্যাণ্ডেলে আসতেই দেখে সবাই হাঁ করে মুর্তির দিকে তাকিয়ে আছে।স্নিগ্ধা তাকাতেই চমকে ওঠে। কিন্তু একী!! সরস্বতীর মাটির  মুখে পোড়া পোড়া অ্যাসিডের ছাপ।দুচোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। কিন্তু মুখে এক আশাজনক হাসি।কেউ সেই হাসি দেখে আর কিছু বলতে পারছে ন।সবাই যেন পাথর হয়ে গেছে
।স্নিগ্ধা ও তীর্থ।
দূরে তীর্থ দাঁড়িয়ে ছিল। স্নিগ্ধা পিছন ফিরতেই ওকে দেখতে পেলো। একি তীর্থ কাঁদছে নাকি?
স্নিগ্ধা কাছে যেতেই চোখ মুছে স্মার্ট সাজলো তীর্থ
-কে কেমন আছো সি সি স্নিগ্ধা
-ভালো। ঠাকুর টা তুমি গড়েছো?
-হ্যাঁ মানে,কি বলবো, রাগ করেছো?
-পাগল একটা
-আর কিছু বলবে না
-কি বলবো
-যেটা আগের বছর বলার কথা ছিল
-না
-হুম
তীর্থ কথাটা শুনতেই চোখে সানগ্লাস টা চাপিয়ে নিয়ে চোখ ঢাকলো
পেছন ফিরে একটু এগোতেই স্নিগ্ধা ডাকলো
-শোনো
-হ্যাঁ কিছু বলছো
-আমি তোমাকে ভালবাসি তীর্থ
দুটো ঠোঁটে আলতো হাসি ফুটলো। প্যান্ডেলে তখন কেউ বাজিয়েছে "তোমার কাছে এ বর মাগি, মরন হতে যেনো জাগি"

No comments:

Post a Comment