Friday 10 March 2017

বসন্ত বিষয়ক গদ্য .................................................................................................................................................................................


বসন্ত জাগ্রত দ্বারে

অদিতি সেন চট্টোপাধ্যায়




কবে কখন কীভাবে যে বসন্ত এসেছিল জীবনে,
মনে নেই।
শুধু মনে আছে, মায়ের কোল জড়িয়ে ঘুম ভাঙ্গতেই
হঠাত একদিন কোকিল ডেকে উঠেছিলো।
কোলের ভাইটি সদ্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে তখন।
কি এক অজানা আশঙ্কায় ওকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়েছিলুম।
তারপর থেকে খুব সাবধানে, ওর পিঠ জড়িয়ে, শক্ত করে হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যেতুম।
হ্যাঁ, এভাবেই বসন্ত এলো-
কোকিলের ডাক আর এক অজানা ভয় নিয়ে;
প্রিয়জনের হারিয়ে যাবার ভয় ।
তখন বসন্তে একটা হাওয়া দিত।
বেশ টের পেতুম,
সকালবেলার মন ভালো করা হাওয়াটা
বিকেল হলেই কেমন পালটে গিয়ে মন-খারাপ-করা হাওয়া হয়ে যেত।
নদীর ধারে গিয়ে দাঁড়ালে কাঁচা আমের গন্ধ, আরো কী কী সব গন্ধ পেতুম ।
গুন গুন করে গান আসত-"আজি এই গন্ধবিধুর সমীরনে"।
মনের মধ্যে, আকাশে, বাতাসে, গাছের পাতায় , ঘাসে কি যে এক আন্দোলন শুরু হত
সে কী, সে যে কী কিছু বুঝে ওঠার আগেই
আবার সুর এসে পড়তো- এবার ভাসিয়ে দিতে হবে আমার এই তরী।
আর সত্যি সত্যি নদীর জল ছলছল করে উঠত।
দুএকটি ঝরা পাতা উড়ে এসে ছুঁয়ে দিয়ে যেত।
নদীর ওপার থেকে মনকেমনের বাঁশীর সুর ভেসে ভেসে আসতো।
আমি মনে করার চেষ্টা করতুম- কোথায় যেন যেতে হবে
কোথায় যেন যাবার আছে...
সেদিন প্রথম রাত্রে ঘুম ভেঙ্গে দেখলুম, চাঁদের আলোয় বন্যা এসেছে।
থইথই চাঁদের আলো আমার বিছানা জুড়ে।
সেই আলোয় হাত বুলাচ্ছেন আমার পরমাসুন্দরী মা।
তার দুইগাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে মুক্তোর মত চোখের জল।
তিনি গাইছেন- নিবিড় অমা-তিমির হতে বাহির হল জোয়ার স্রোতে
শুক্লরাতে চাঁদের তরনী...
সেদিন রাত্রে আমার সুখ আর দুঃখ মিলেমিশে গেল
আমার আলো আর আলো রইল না
অন্ধকার অন্ধকার রইল না
যা রইল, তা নিটোল এক ছবি
সে ছবির ক্যানভাস রবিঠাকুর
আর রঙ আমার মা...
তুলি হাতে আজও এঁকে চলেছি
যেদিন সম্পূর্ণ হবে, সেদিনই আমার শেষ বসন্ত।



No comments:

Post a Comment