Friday 10 March 2017

বার্ণিক এর গল্প –
.......................................................................................................................................
ইমোশন
------- প্রাণকৃষ্ণ ঘোষ



কাল রাতে ডক্টর সেনগুপ্ত ফাইনাল চেকাপ করে গেছেন । শোভনা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ । দুর্বলতা যেটুকু আছে সেটা ধীরে ধীরে কেটে যাবে । ইউরিন ইনফেকশন থেকে ধুম জ্বর এসেছিল শোভনার । অভিজাত প্রাইভেট হসপিটালের ব্যাক্তিগত কেবিনে , দুইদিনে মোট ছয় বোতল স্যালাইন টেনে শোভনা এখন বেশ চাঙ্গা । হবে নাই বা কেন । ওর মতো এলিট ক্যাটেগরির ট্রিটমেন্ট ক’জনই বা পায় ! ওর মতো বিলেত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার বরই বা ক’জনের কপালে থাকে । সানন্দা’র পাতা ওলটাতে ওলটাতে সুদিপকে টেক্সট করে শোভনা । শোভনা জানে সুদিপের আজ ইমপরট্যান্ট মিটিং । তবুও টেক্সটটা করে । সুদিপ শোভনার জন্য এলিট ক্যাটেগরির ট্রিটমেন্ট এর ব্যবস্থা করলেও খুশি হয়নি শোভনা । সে এসময় বরকে একটু কাছে চেয়েছিল । নিভৃতে । অন্তত চেয়েছিল আজ সুদিপ ওকে এখান থেকে বাড়ি নিয়ে যাক । এইসময় সুদিপের সঙ্গ না পেলেও শোভনা নার্সের সঙ্গ পেয়েছে সারাক্ষণ । মাঝরাত অব্দি জেগে থেকে শোভনার সঙ্গে গল্প করেছে নার্স । ঠিক সময়ে এগিয়ে দিয়েছে ওষুধ । সারাক্ষণ বকিয়েছে শোভনা তবুও বিরক্তি গ্রাস করেনি নার্সকে ।
 আপনি আজ বাড়ি যাবেন ম্যাডাম ---হরলিক্সের গ্লাসটা শোভনার দিকে এগিয়ে দেয় নার্স ।  ডক্টর সেনগুপ্ত কাল রাতেই রিলিজ করে দিয়ে গেছেন । ---নার্সের হাত থেকে হরলিক্সের গ্লাসটা নিয়ে চুমুক দেয় শোভনা । ---আপনি না থাকলে বোধহয় এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা হত না আমার । আপনি যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন ! সত্যি আপনি ভীষণ মানবিক । কথা বলতে বলতে শোভনা খেয়াল করে নার্স কেমন যেন অন্যমনস্ক ।
 আমি তাহলে মানবিক হতে পেরেছি ম্যাডাম – শোভনা কিছু বোঝবার আগেই প্রশ্নটা শোভনার দিকে ছুঁড়ে দেয় নার্স ।
---আপনি তো মানবিক বটেই । মানবিক না হলে কেউ নার্স হতে পারে ।
---আমি অপরাধী ছিলাম ম্যাডাম । আমি ডে কেয়ার সেন্টারে বাচ্ছাদের দেখাশুনো করতাম । বাচ্ছার বাবা – মা আমাদের কাছে বিশ্বাস করে বাচ্ছাকে রেখে যেত আর আমি সারাদিন বাচ্ছাদের উপর অত্যাচার করতাম । বাচ্ছাদের মারধোর করতাম । আমার খুব রাগ হতো ওদের দেখে । খুব হিংসে করতাম ওই নিষ্পাপ শিশুগুলোকে । ---হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে নার্স । ওর কান্না যেন অমানবিক থেকে মানবিক হয়ে ওঠার পরিচায়ক । অন্ধকার থেকে আলো খোঁজবার অঙ্গিকার ।
--- আপনার চোখের জলই বলে দিচ্ছে আপনি মানবিক হতে পেরেছেন । নিজেকে শুধরে নিতে পেরেছেন এটাই বা ক’জন পারে বলুন তো । কান্না থামান । আমায় হাসি মুখে বিদায় দিতে হবে তো ।
---জানেন ম্যাডাম যার জন্য আমি আমার ভুল বুঝতে পারলাম সে মানুষটা আমায় ছেড়ে চলে গেছে । শুধু বলে গেছে ‘যেদিন তুমি সত্যিকারের মানবিক হবে দেখবে আমি ঠিক তোমার কাছে পৌঁছে গেছি’ । ---বলুন না ম্যাডাম আমি সত্যিকারের মানবিক হয়েছি কিনা ?
---শোভনা ভালবাসার যন্ত্রণা বোঝে । শোভনা এটাও জানে প্রকৃত ভালবাসা যে কোনও অসম্ভবকেই সম্ভব করতে পারে । কিন্তু নার্সকে সান্ত্বনা দেবার ভাষা পায় না শোভনা । --- এমন সময়েই শোভনার কেবিনে প্রবেশ করে একজন শুভ্রকান্তি যুবক । ওয়েল ড্রেসড । হাতে একটা ফুলের তোরা । তোরাটার মধ্যেই একটা কার্ড ঝোলানো যাতে বড় বড় করে লেখা ‘গেট ওয়েল সুন’ ।
---দিস ইজ ফর ইউ ম্যাডাম । মিস্টার সন্দিপ রায় হ্যাজ সেন্ট দিস ফর ইউ । স্যারের কড়া নির্দেশ ছিল সকাল দশটার মধ্যে ম্যাডামের কাছে সারপ্রাইজ পৌঁছনো চাই । তাই নিজেই চলে এলাম । কোনও স্টাফকে পাঠালে স্যারের ইমোশনটা গুরুত্ব না ও পেতে পারতো । - এক নাগাড়েই বলে চলল যুবক । ক্যুরিয়ার কোম্পানির মালিক।
---বরের সারপ্রাইজে মন গলেছে শোভনার । আফটারঅল সন্দিপের ইমোশন গুলো ভীষণ চেনা শোভনার । নিজে আসতে পারে নি কিন্তু ঠিক পাঠিয়ে দিয়েছে অনুভূতি । সন্দিপকে টেক্সট করতে গিয়ে কেবিনের কোণে চোখ যায় শোভনার । দাঁড়িয়ে আছে নার্স । যুবকটির দিকে চেয়ে আছে অপলক । কথা বলার ক্ষমতাও যেন অবশিষ্ট নেই । শোভনার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে যুবকটি । তার চোখেমুখে একটা অহংকার পরিলক্ষিত হচ্ছে ।  বোধহয় ইমোশন কে ঠিক জায়গায় ঠিক সময়ে পৌঁছে দেওয়ার অহংকার ।

1 comment: