Friday 10 March 2017

বার্ণিক এর গল্প –
.......................................................................................................................................
প্রনয় স্মৃতি
সুমন কান্তি দাস।।


""ভালোবাসা মানেনা বাঁধা
এতো দক্ষিনের হাওয়া,
লাগলে পরে গায়ে
মনে জাগে নেশার ফোঁয়ারা।""
অতঃপর আমি বিদ্যালয়ের একেবারে পুব দিকের দোতলার সায়েন্স রুমের বারান্দার
রোয়াকে বসলাম।তখন টিফিন চলছে।
এমন সময় বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে তিনতলায় পাম গাছের আড়ালে আমার দৃষ্টি
হঠাত্‍-ই থমকে গেলো।দেখলাম-
এক মেয়ে তার সহপাঠির সাথে গল্প করছে।তার কথার ভাষা আমার কানে না এলেও তার
নিষ্পাপ শরীরের ভাষা ঠিকই এসেছিল।আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম অপলক
দৃষ্টিতে।কেন জানিনা আমি আমার চোখটাকে ঐসময় অন্য দিকে মনোনিবেশ করতে
পারলাম না।মনে হয়েছিল যেন আমার শরীরের সমস্ত শক্তি চোখে এসে মিশেছে
শুধুমাত্র তারই দিকে দৃষ্টি দিতে। তখনই বোধহয় তার প্রতি আমার শরীরটা
দূর্বল হয়ে পড়েছিল।যেন একটা অন্য জগতে অন্য রূপে অন্য ধ্যানে
ছিলাম।হঠাত্‍ ই ঢং ঢং করে টিফিন শেষের বেল বেজে উঠলো।মনে হলো কে যেন
হিংসে করেই আগেভাগে বেল বাজিয়ে দিয়েছে।
      তারপর থেকেই আমার মনটা চনমনা হয়ে উঠলো,কিছুটা ভাবুক,কিছুটা
লাজুক।তাকে দেখলেই আমার শরীরের সমস্ত অঙ্গ ক্ষনিকের জন্য শিথিল হয়ে
যায়,চোখ অনাবিল তৃপ্তি অনুভব করে আর মন ফুরফুরে বাতাসের মতো চঞ্চল হয়ে
ওঠে।এভাবে ধীরে ধীরে আমার মনের ছোটো কুঠুরিতে তার প্রতি একটু একটু
ভালোবাসা জমা
হতে লাগলো।
তার প্রেমে পড়েছিল প্রথম আমার চোখ তারপর মন আর এখন আমার প্রতিটি অঙ্গ।
           আমার জীবনে প্রথম কাউকে ভালোবাসা এবং তাকে ঘিরে নানা পাগলামির
চরম সীমায় পৌছানোর সূত্রপাত হয় সেই মেয়েটিকে নিয়েই তখন আমি একাদশ
শ্রেনীতে পড়াশুনা করছি।সবে মাত্র
মাধ্যমিক পাশ করেছি আর সাথে সাথে ভালোবাসতেও শিখেছি।আমাদের এক শিক্ষক
বলেছিলেন--'মাধ্যমিক পাশ করার পর এই সময়টা একটু সাবধানে থাকো,কারন এই সময়
তোমরা যাকে দেখবে তাকেই ভালোলেগে যাবে।আগে নিজের ভবিষ্যত্‍ তৈরি করো।এইসব
পরে করার অনেক সময় পাবে।'
তিনি বলেছিলেন কারন তিনি জানতেন যে ,এই সময় অনেক ছাত্রছাত্রী পথ ভুল করে
তলিয়ে গেছে।তারও জীবনে এই সময়টা এসেছিল একদিন,তাই তার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
তার এই কথাটি আজও স্মৃতিতে হিরকের মতো জ্বলজ্বল করছে, তবুও তার কথা আমি
রাখতে পারিনি।
শেষ অব্দি প্রেমেতেই পড়ে গেলাম।
             আমি মাধ্যমিক পর্যন্ত বেশ ভালোই ছিলাম বলতে গেলে।আমাদের
ক্লাসের সহপাঠি মেয়েদের থেকে দূরে দূরে থাকতাম।ক্লাসের হাতেগুনা
কয়েকটা মেয়ের নাম জানতাম।কোনো মেয়ের নাম জানার চেষ্টা বা ইচ্ছা কোনটাই
ছিল না।তখন কোনো মেয়ের পেছনে সময় নষ্ট করার মতো মানসিকতা আমার মাথাতেই
ছিল না।সেইসময় মেয়েদের সাথে কথা বলতেই ভয় করতো,প্রেম করা দূরেই কথা।
কিন্তু আজ কোনো সহপাঠি মেয়েদের সাথে কথা বলতে ভয় করেনা তবে হ্যাঁ, লজ্জা
করে,ঐ মেয়েটির আভাস ই আমার জীবনকে পরিবর্তনের শিখরে তুলে দিয়েছে।
      যাকে ঘিরে পাগলামি সে আর কেউ না ,সে আমাদের ক্লাসেরই সহপাঠি।আর্টস
বিভাগের ছাত্রী।তার নাম "মোনু"।ভালোবেসে আমি নাম দেয়েছিলাম "ভাবনা"।
   একটা মেয়ের মধ্যে যতগুলি গুন থাকা দরকার,আমি তার মধ্যে তা দেখেছি।
বিশেষ করে তার চুল আমাকে তার প্রতি তীব্রভাবে আকৃষ্ট করতো।আমি হলফ করে
বলতে পারি,তার চুলের মতো অধিকারিনী আমাদের বিদ্যালয়ে কেউ ছিল না।তার
চোঁখ,তার মুখ আর হ্যাঁ তার নাক সবকিছুই প্রকৃতি যেন ধাপে ধাপে সাজিয়ে
রেখেছে।তার সৌন্দর্য যেন অবিনশ্বর।মনে হয় সে যেন এক সদ্যফোঁটা গোলাপ,তার
পাপড়ি মিলে বাতাসে সুগন্ধ ছড়িয়ে আমাকে ডাকছে তার সাথী হতে।
   তার মধ্যে ছিল এক আকাশ শুদ্ধতা,ভোরের নীরবতা,এক মেঘ অভিমান,এক পৃথিবী ভালোবাসা।
   সে যেন আমার শীতের ভোরে এক চিমটি রোদ।গরম দুপুরের শীতল ছাওয়া,শরতের
সন্ধ্যারাতে উচ্ছ্বসিত কাশফুল, বসন্তের  সুরের মালা,বর্ষার রাতের রিমঝিম
নীরবতা।
         তাকে আমি বহুদিন থেকেই জানতাম।কোনোদিন কথা বলিনি।কোনোদিন তাকে
নিয়ে ভাবিনি।কিন্তু সেইদিন,হ্যাঁ সেইদিন তাকে ভালোবাসার দৃষ্টিতে নতুন
রূপে নতুন করে জানতে শিখি।
এই কথাটা আমার সহপাঠিদের কানে যেতেই তারা আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতে
শুরু করে।আর বলে- "তুই এতোদিন ধরে তাকে দেখছিস সেই ফাইভ থেকে আর তোর এই
ইলেভেন এই ওকে ভালোলাগলো?"
   সেইসময় আমার সহপাঠীদের প্রশ্নে নির্বাক ছিলাম।আমি ওদের বলতে গিয়েও
বলতে পারলাম না যে "কখন,কেন,কিভাবে মানুষের মনে কাকে ঘিরে ভালোবাসা বাঁসা বাঁধবে তা
কেও জানে না"।।

No comments:

Post a Comment