Friday 10 March 2017

বার্ণিক এর অণুগল্প –
.......................................................................................................................................
অপঘাত
  ধরিত্রী গোস্বামী


তারাপদ মুহুরির নেশা ছিল মাছ ধরা। ছুটিছাটার দিনে ছিপ বঁড়শি নিয়ে দূরদূরান্তে যাওয়া ছাড়াও নিত্যদিন খিড়কির পুকুরে ফেলা থাকত একটা খাপলা জাল। কোর্টে বেরুবার আগে মুখে নিমের দাঁতনটি ঝুলিয়ে সে রোজ ঘাটে যেত সরেজমিনে কি মাছ পড়েছে দেখতে। পছন্দমত কিছু পেলে নিয়ে এসে ফেলে দিত রান্নাঘরের দোরগোড়ায়। ইচ্ছেটা পরিষ্কার, গরম গরম ভেজে দাও ভাতের সঙ্গে। 
সেবার ভরা বর্ষাকাল। পুকুরে জল টইটম্বুর। খাপলায় খলবল করছে মাছটা, কিছুতেই বাগে আনতে পারছে না তারাপদ।   এদিকে বেলা গড়িয়ে যায়, কোর্টে বেরুতে হবে। “নিকুচি করেছে” বলে তারাপদ পুকুরে দুটো ডুব দিয়ে ফিরে গেল বাড়ি। হাতের  চেটোয় বেশ কয়েকটা জায়গা রক্তাক্ত। ডেটলের শিশি থেকে তুলো ভিজিয়ে লাগিয়ে নিল ক্ষতস্থানে। রান্নাঘরের বারান্দায় খেতে বসেছে, গরম মুসুরির ডাল, পলতার বড়া আর আলু পোস্ত। ভাই উমাপদ উঠোনে বসে সাইকেলের চেনে তেল লাগাচ্ছিল। তাকে ডেকে বলল তারাপদ, “উমা, স্নানের সময় দেখিস ত, বড় একটা শোল বা মাগুর পড়েছে জালে, কিছুতেই ব্যাটাকে ধরতে পারলুম না, শালা দাঁড় ফুটিয়ে ফুটিয়ে হাতটা ঝালাপালা করে দিলে। এনে রাখিস, রাতে খাব ওটাকে।” সম্মতি-সূচক ঘাড় নাড়ে উমাপদ। দাদার মত তারও মাছ ধরার খুব নেশা।    
দুপুর দেড়টা নাগাদ উমাপদ গেল নাইতে। রোজই এরকম সময় যায়। তবে দাদার মত হাত ঢুকিয়ে জ্যান্ত মাছকে জব্দ না করে সে খাপলা জালটাকে টেনে তুলল পাড়ে। আর যা দেখল তাতে মাথা ঘুরে গেল বোঁ করে। মাছ কোথায়? প্রায় তিনহাত লম্বা কালো কুচকুচে এক কেউটে ফোঁসফোঁস করছে জালে আটকা পড়ে।
বাড়ির মেয়েদের কাউকে কিছু না জানিয়ে উমাপদ সাইকেল হাঁকিয়ে ছুটল সদরে। না জানি কি অনর্থ ঘটে গিয়েছে এতক্ষণে। সকালে দাদার হাতে লালচে সব কামড়ের দাগ দেখেছিল সে।  কোর্টে পৌঁছে সে যে দাদাকে আর জীবিত অবস্থায় পাবেনা  তা একরকম নিশ্চিত। কিন্তু দড়াম করে সাইকেলটা ফেলে লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি ভেঙে উঠেই এক্কেবারে তারাপদর মুখোমুখি পড়ে গেল সে। তারাপদ তখন সবে টিফিন সেরে বাইরে বেরিয়েছে একটা বিড়ি ধরাবে বলে। “কি রে উমা, হাঁপাতে হাঁপাতে এলি কেন? কার কি হল?” জানতে চায় বিস্মিত তারাপদ। ছেলেমানুষ উমা তার এতক্ষণের চাপা উৎকণ্ঠায় কেঁদে ফেলে, “দাদা কেমন করে বেঁচে আছিস? ওটা মাছ নয় রে, সাক্ষাৎ যম, একটা কেউটে রে দাদা!”
“কেউটে? সকালে আমাকে কেউটে সাপে কেটেচে? সর্বনাশ!” তৎক্ষণাৎ কোর্টের বারান্দাতেই ঝপ করে পড়ে মারা গেল তারাপদ মুহুরি।                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                 

No comments:

Post a Comment