মিরর এফেক্ট
আলোচক-শুভম চক্রবর্তী
----------------------------------------------------
কবিতা কী এবং কেমন ,যুগপৎ দুটি প্রশ্ন নিয়ে অসংখ্য লেখা হয়েছে,হচ্ছে,হবে। গুহালিপি, 'দুঘটনাগ্রস্ত নাবিকের কাহিনি', 'গিলগামেশ
মহাকাব্য' থেকে আমাদের 'চর্যাপদ' ক্রমান্বয়ে কিছু বাঁক ও বদল সর্বত্রই চোখে
পড়বে। জিম মরিসন- এর মতে --"আসলে কবিতা কোনও কিছু বলতে চায়না। সে শুধু বিভিন্ন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে
দেয়।সব দুয়ার। পাঠক তার নিজের পছন্দসই একটা দরজা দিয়ে ঢুকে পড়তে পারে।"
এই সময়ের কবিতা, শুধু এই সময় কেন আবহমান কালের কবিতাই সম্ভাবনাময়তাকেই দ্যোতিত করে । 'সিম্বলিজম' কোনো শেকড়হীন-আলটপকা বিষয় নয় ,ভারতীয় অলংকার শাসত্র
নেড়েচেড়ে দেখলেই চোখে পড়বে -- "শ্রেষ্ঠ কাব্য বাচ্যার্থে পরিসমাপ্ত না হয়ে বিষয়ান্তরে ব্যঞ্জনা করে !
" এই বিষয়ান্তর ব্যঞ্জনাই কবিতাকে কবিতা করে
তোলে,আর কেউ কেউ হয়ে ওঠেন কবি।
আলোচ্য কাব্যগ্রন্থ কবি কুমারেশ
তেওয়ারী-এর 'মিরর এফেক্ট'। কুমারেশ তেওয়ারীর কবিতায় মিথকথন ও বিমূর্ত বিষয়ভাবনার সমন্বয় পাই, যা ঈষৎ ছোঁয়া যায়,আবার যায়ও না।
প্রচ্ছদের এলোমেলো বিন্যাস এবং গ্রিলদেওয়া জানালার ভেতর অর্ন্তজগতের বহুমাত্রিক
প্রকাশ কাব্যিক রোমাঞ্চ জাগায়। এই রোমাঞ্চের নান্দনিক ল্যাম্পপোস্টের নীচে বসে পড়ে
নিতে হয় কিছু অনিবার্য নির্জনতা-- অব্যক্ত সংবেদনশীলতা--সমকালীন শব্দগুচ্ছ।যেখানে----
" গিরগিটির কথা উঠলেই এক বহুরূপী এসে
তার চিমটা নাড়িয়ে রেখে যায় সম্মোহন।"
তার চিমটা নাড়িয়ে রেখে যায় সম্মোহন।"
আর প্রবল শরীর কুহকে,যৌন আবেদনের নিপাট সংকেতে -----
"রাতের শরীর থেকে যখন গড়িয়ে নামছে হারমোনিয়াম। "
ঠিক তখনই -- সিনড্রোম,কনসার্ট,আলটিমেট, মেটাফর,ইরেজার, টেবিলক্লথ,ফেরারিটেল এর মতো কিছু লেখায় ওঠে আসে যাপনের 'রূপান্তর ও ক্যামোফ্লাজ'। লক্ষনীয়,প্রতিটি লেখাতেই প্রচলিত ছন্দকাঠামো অস্বীকৃত
।নির্মাণ খুব বেশি গুরুত্ব পাইনি, আবার পেয়েছেও !
কিছু লাইন নিজেদের বারবার পড়িয়ে
নেয়,ছুঁইয়ে নেয় তুলতুলে শরীর। যেমন--
"সম্পর্কই আসল, ঘুড়ি দ্বিমাত্রিক
উপলক্ষ মাত্র"
"শরীরময় কাঁটা নিয়েও কীভাবে তারা মেহেরবান ছড়িয়ে দেয় কোমলগান্ধার"
"যে কোনো শোবার ঘরের কাছে এলে শিশিরভেজা রাত
শুনতে পায় কুয়োর গভীর থেকে জল তুলছে সম্পর্কেরা ।"
শুনতে পায় কুয়োর গভীর থেকে জল তুলছে সম্পর্কেরা ।"
কোনো কাব্যগ্রন্থ ভাবায়,থমকে দেয় আর কোনো কাব্যগ্রন্থ প্রতিস্পর্ধাকে প্রশ্ন করে। কুমারেশ তেওয়ারীর 'মিরর এফেক্ট' নিজের যাপন,মননশৈলিকে প্রতিবিম্বিত করে রেখে যায় কিছু প্রশ্নচিহ্ন--
"যাকে কাঁঠালিচাপাগন্ধী মানুষেরা অলকানন্দা
বলে।"
বইটিতে "আর" --এর বহুলব্যবহার কখনও
কখনও চোখকে পীড়া দেয়। এ বিষয়ে কবিকে একটু ভেবে দেখার অনুরোধ ।আপাতত এই বই এর জন্য
কবির একটি আলিঙ্গন প্রাপ্য,পাঠকের
অনুভূতির আলিঙ্গন, যা কৃত্রিম নয়,অনিবার্য- ' মিরর এফেক্ট'।
'মিরর এফেক্ট'
কুমারেশ তেওয়ারী
কবিতা পাক্ষিক
কলকাতা বইমেলা,২০১৭
কুমারেশ তেওয়ারী
কবিতা পাক্ষিক
কলকাতা বইমেলা,২০১৭
No comments:
Post a Comment