Tuesday 27 June 2017

রম্যরচনা

বিরল প্রেম

তনিমা হাজরা

গাবলুদের প্রতিবেশী দ্বিজপতি জেঠুদের বাড়ীতে ভাড়া থাকতেন নীহারকাকু আর ছবি কাকিমা। 

ছবি কাকিমার গায়ের রঙ বেশ কালো, গোল গোল চোখ আর মোটাসোটা গড়ন। আর নীহার কাকুর খ্যাসখ্যাসে ফ্যাকাসে ফরসা রঙ, মাথায় বিরল কেশ এবং টিপিক্যাল আমাশয়গ্রস্ত চেহারা।

নীহারকাকু সরকারী অফিসের পিয়ন।

গাবলুর বয়স এখন তেরো। রঙিন পৃথিবীর রঙের বর্ণমালা সে সবে আস্তে আস্তে পাঠ করতে শিখছে।তার স্কুলে যাওয়া বা খেলতে যাওয়া আসার পথে নীহারকাকুদের একচিলতে ঘরখানি পড়ে।

গায়ের রঙ কালো বলে পাড়ার নাক সিঁটকানো মাসিমা পিসিমারা ছবি কাকিমাকে আড়ালে "কালোবউ" বলে ডাকে। তাদের আরো গাত্রদাহের কারণ নীহারকাকু আর ছবিকাকিমার সুখী কলহবিহীন দাম্পত্য।

বিশেষত, এই পৃথিবীর মোটামুটি সিংহ ভাগ মানুষের ই চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাউকে সুখে থাকতে দেখলে পিঠে অদৃশ্য ভূতের কিল অনুভব করা।

এই ঘটনার প্রবাহ মালা যখন শুরু হচ্ছে তখন উত্তমকুমার জীবিত।আর উত্তমকুমারের প্রতিটি সিনেমা ছবি কাকিমার অন্তত তিন-চার বার তো দেখা চাই ই চাই।তার সারাঘরে উত্তমকুমার নানা ভঙ্গীতে আঠা সহযোগে দেওয়ালে লেপ্টে রয়েছেন।যাকে বলে কিনা "die heart fan".

এমতাবস্থায় ছবি কাকিমাকে প্রায়শই দেখা যেত সুপ্রিয়া স্টাইলে চূড়ো খোঁপা করে, মুখে বিস্তর হিমানী স্নো মেখে,-কপাটি বিস্তৃত কাজল টেনে,খোঁপায় চন্দ্রমল্লিকা গুঁজে,চকচকে গাজী সিল্কের শাড়ি পরে, শস্তা হিলের কেঠো ধ্বনিতে রাস্তা কাঁপিয়ে লিকলিকে নীহার কাকুর হাত ধরে ইভনিং শো য়ে সিনেমায় যেতে।

তারা বেশ সুখীই ছিল।তখনকার দিনে নীহারকাকু সাত সকালে আগে ভাগে ঘুম থেকে উঠে স্টোভ জ্বালিয়ে, চা বানিয়ে ছবি কাকিমাকে "bed tea"দিতেন যা কিনা গাবলুর মা দের মতো মহিলারা স্বপ্নে দেখারও দু:সাহস করেন নি কক্ষনো।

হঠাৎ একদিন উত্তমকুমার মারা গেলেন।রেডিও তে সেই বিনামেঘে বজ্রপাতের মতো নিদারুণ সংবাদ শুনে হতবুদ্ধি ছবিকাকিমা শাঁখা-নোয়া খুলে,সিন্দুর মুছে,সাদা থান পরে এলোথেলো কেশে বারান্দার চৌকিতে রোদনে বসলেন।

অবাক গাবলু রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে ড্যাবডেবে চোখ মেলে দেখলো------

ছবি কাকিমা অনর্গল ফেঁউ ফেঁউ করে কেঁদে চলেছেন আর বলছেন,"আমার হৃদয় আজ আঁধার হয়ে গেল গো,আমার প্রাণনাথ আজ আমায় বেধবা করে চলে গেল গো,আর আমি কি নিয়ে বাঁচব, কার স্বপ্ন দেখব  গোওওওওওওও"আর নীহার কাকু একটি এলুমিনিয়াম এর কাঁসিতে ডাল ভাত মেখে গাল গাল করে ছবি কাকিমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন আর বলছেন,"ছবুসোনা লক্ষীটি আমার আর কেঁদো না, খেয়ে নাও, উপুসী থেকো না। প্রাণের মানুষ কি আর কারো চিরকাল থাকে সাথে বলো?"

ক্ষুদ্রবুদ্ধি গাবলুর নিরেট মাথায় কিছুতেই হিসেবটা ঢুকলো না যে, কার প্রেম ওজনে বেশি ভারী,উত্তমকুমারের প্রতি ছবিকাকিমার নাকি ছবিকাকিমার প্রতি নীহারকাকুর?????




1 comment:

  1. Prathomik hasi ta bojai roilo... Kintu bhitore ortho ta o kom kichu noy.. Sundor

    ReplyDelete