মৃত্যুর পর আমায় যেতে হবে আরও দূরের দেশে
আলোচক- সম্পর্ক মন্ডল
সমাজ
শব্দটি ক্ষয়ে যাওয়া-- পুঁজে কাবু হওয়া কিছু পুঁজিবাদীদের নির্মিত একটা আধার মাত্র,ভাবুকদের
সেখানে কোনও স্থান নেই, সেখানে শ্রমজীবী মানব সমাজের স্থান নেই, তাই একটা ভাবুক বা
একটা কবির জন্ম হয় তখনই, যখন একটা সমাজের পচে যাওয়া অংশ থেকে ক্রমাগত গন্ধ বেরোতে থাকে।
লক্ষ লক্ষ হাজার হাজার লোমশ হাত তখন সেই কবির উত্থানকে চেপে দিতে যায়, পিষে দিতে চায়
দাঁড়ের বিপুল আঘাতে, কিন্তু কবি তো সত্যদ্রষ্টা, সে নির্ভীক, লেখার জোয়ারে তার মানুষের
হাড় ভাঙার শব্দ,মানুষের ক্ষয়ে যাওয়ার শব্দ তাই বারবার ধ্বনিত হয়। যখন কবি লেখেন---
'সবাই
গালি দিচ্ছিল,' শুয়োরের বাচ্চা '! তুই এখানে!
আমি
ছুটতে ছুটতে ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম। এক হাতে
দশ
টাকা অন্য হাতে শুকনো পাউরুটি। যে যার
মত
গায়ে জল ঢেলে দিচ্ছিল,'পালা। পালা
হারামজাদা।দূরে
গিয়ে মর'
এই
জায়গাটা আমি চিনি। এই দেশটার নাম
বাবা
বলে গেছেন। বাবা বলে গেছেন, এই দেশটা
আমাদের
সব কিছু কেড়ে নিয়েছে, এবং এখানকার
মানুষজন... ( স্বাধীনতার পর)
কখনও
আবার তিনি বলছেন-- ' সামরিক বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদ পদ্ধতি নকল করে/ তারা এখন যুদ্ধ যুদ্ধ
খেলতে মত্ত / শ্রীনগর পড়ে থাকা ধূসর কবরস্থানগুলিতে ( মৃত্যুর পর যে ঘোড়ায় চড়ে তুমি
দেশ পেরোবে)। কবি আঘাতে আঘাতে সমাজের পচে স্থানটিকে চিনিয়ে দিচ্ছেন আমাদের---' আমরা
ভুলতে চাইছি সরকার পক্ষের বীরত্বপূর্ণ উক্তি।/ আমরা ভয়ে কঁকিয়ে উঠছি অস্তিত্ব রক্ষার
অর্থে / আমাদের শিশুরা এখন আর হাসতে জানে না/ কিংবা কাঁদতে....
এই
ক্ষত আমাদের কাশ্মীর হয়ে, দন্তেওয়ারা হয়ে বুকে আঘাত করে রোজ। আমরা তাই কবির সাথে স্বপ্ন
দেখি-- ' ঘন হাততালির কুয়াশায় সামাজিক পশুর অধিকারে / কুড়িয়ে তুলব গান্ধর্ব ভালোবাসা
'
আবার
কখনও ক্ষয়ে যাওয়া স্বপ্ন-বুকে কবি আমাদের ভরসা রাখতে বলেন- 'তোমার স্বপ্ন ঘিরে সারি
সারি সাজানো চিতা।/ তবুও তুমি ভরসা রাখ তোমার দেশের রাস্ট্র ব্যবস্থার উপর'।
এইভাবেই
একটা সিস্টেমের ভেতর কবি একটা অ্যান্টি এস্টাবলিশমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন,সেই এস্টাবলিশমেন্ট
থেকেই আবার নতুন স্বপ্নে বিভোর হয় মানুষ,এ সমাজ। হয়তো এই জয় দিনের শেষে মানবতার জয়,
এই জয় নতুন পৃথিবীর সকালে, এক সত্যদ্রষ্টার জয়।
আলোচ্যমান
এই কবি,যিনি আমাদের এত আশার আলো দিলেন, স্বপ্নের সওয়ারি করিয়ে নতুন সকালের সন্ধান দিলেন,
তিনি, প্রথম দশকের কবি, উদয়ার্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কাব্যময় ইস্তাহারটির নাম- ' মৃত্যুর
পর যে ঘোরায় চড়ে তুমি দেশ পেরোবে'।
এই
ইস্তাহারের বারুদ আমাদের আগুনকে স্পর্শ করে জ্বলে ওঠে আজ। কাব্যবন্ধু, হে পাঠক, আবার
নতুন সকালে দেখা হবে, নতুন আগুনে, আমাদের!
মৃত্যুর পর যে ঘোড়ায় চড়ে তুমি দেশ পেরোবে
উদয়ার্নব
বন্দ্যোপাধ্যায়
কবিস্টেশন
প্রকাশন, মালদা-০১
প্রচ্ছদ--
বাবাই ২
No comments:
Post a Comment