Tuesday 27 June 2017

প্রবন্ধ


মডার্ন চিত্রকল্প, পোস্টমডার্ন চিত্রকল্প

মলয় রায়চৌধুরী



মডার্ন বা আধুনিক কবিতায় চিত্রকল্প থাকতো নিটোল, প্রতীকী, একক, সমগ্র,  ব্যাখ্যাযোগ্য। বোঝা যেত যে কবির হাতে ছিল অফুরন্ত সময় এবং তাঁর জীবনের গতি এখনকার তুলনায় ছিল মন্থর। অধিকাংশ মডার্ন কবিতা তাই এক-স্হিতি, এক-অভিজ্ঞতা, এক-ছবি নির্ভর ছিল। বস্তু, স্হান, প্রাণী সংস্হা, আইডিয়া ও সময়, যে ছয়টি জিনিসকে দিয়ে অভিজ্ঞতা-বিশেষটি গড়ে ওঠে, তার যে-কোনওটির একটির প্রতি আলোকপাত করে তিনি তাকে রচনার বিষয় ঘোষণা করতেন। বাস্তবের যে-প্রতিমা তিনি নিজের মস্তিষ্কে নথিবদ্ধ করে রাখতেন তা সংখ্যায় অল্প ছিল বলে যেটা চাই তা প্রয়োগ করতে পারতেন। তাছাড়া, ভাষার চেতনার তুলনায় তিনি নিজের চেতনা নিয়ে চিন্তিত থাকতেন।
পোস্টমডার্ন কবিতায় চিত্রকল্প হয়ে গেছে ভঙ্গুর। তার কারণ বাস্তব জগৎ থেকে প্রতিমায় ঠাসা সংকেত অত্যন্ত দ্রুত বেগে একের পর এক এসে আছড়ে পড়ছে কবির পঞ্চেন্দ্রিয়ে। প্রতিমা বহনে সক্ষম উদ্দীপকগুলোকে ঘনঘন সক্রিয় হয়ে উঠতে হচ্ছে। মডার্ন কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায়ের রচনার সঙ্গে পোস্টমডার্ন কবি জহর সেনমজুমদারের পাঠকৃতি তুলনা করলেই টের পাওয়া যাবে ব্যাপারটা। প্রক্রিয়াটি কালিক ও অনিবার্য। এতে কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ, এসমস্ত চিন্তা অবাস্তব। মডার্নের তুলনায় পোস্টমডার্ন এগিয়ে যাচ্ছে মনে করার কারণ নেই।
কবির মস্তিষ্কে যে প্রতিমাগুলো নথিবদ্ধ তার উৎসসূত্র হল চারিপাশ থেকে তাঁর ওপর উদ্দীপকসমূহের বৃষ্টি। মডার্ন কবিদের ক্ষেত্রে এই বৃষ্টি ছিল ঝিরঝিরে, পশলায়-পশলায়। পোস্টমডার্ন কবির ক্ষেত্রে তা মুষলাধার, অবিরাম। বহির্জগতে উদ্ভূত শব্দতরঙ্গ, আলো ইত্যাদি আঘাত হানে কবির ইন্দ্রিয়ানুভূতিতে। একবার তা উপলব্ধি করলেই, এতাবৎ অজানা এক বিস্ময়কর প্রক্রিয়ায়, সংকেতগুলো পালটে যায় বাস্তব জগতের প্রতিকল্পে, প্রতিমায়। এক পশলা থেকে আরেক পশলার ফাঁকে মডার্ন কবি, লেখক, স্হপতি, ভাস্কর, চিত্রকর, ভাবুক সেগুলোর বর্গীকরণ করতে পারতেন। হিসাব রাখতে পারতেন তাদের।
সংকেতগুলোকে সুবিধার্থে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: কোডেড এবং আনকোডেড। পথে চলার সময়ে শুকনো লিচুপাতা দৃষ্টিগোচর হল হয়তো, উড়ে গেল হাওয়ায়। খসখস শব্দ কানে এলো। কবি এগুলোকে ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে ধরে রাখলেন। ইন্দ্রিয়ের দ্বারা সংগ্রহ খরা এই সংকেতগুলো কিন্তু মানুষের বানানো নয়। ওগুলোর দ্বারা কোনও লোক বা সমাজ কোনও বার্তা পাঠায়নি। পুরো পরিদৃশ্যটি টের পাবার জন্যে কবিকে সমাজের বানানো নির্দেশিকার ওপর সরাসরি নির্ভর করতে হচ্ছে না। অর্থাৎ সমাজস্বীকৃত চিহ্নাবলী এবং সংজ্ঞাকে খাটাবার প্রবোজন হচ্ছে না তাঁর। এরকম ঘটনা সব সময় ঘিরে থাকে মানুষকে। যখন তা কবির ইন্দ্রিয়ানুভূতির এলাকার মধ্যে ঘটে, তখন তিনি তাতে অংশগ্রহণ করেন, জ্ঞাতসারে-অজ্ঞাতসারে। তা থেকে আনকোডেড বার্তা সংগ্রহ করে পাল্টে ফ্যালেন মস্তিষ্কে সংরক্ষণযোগ্য প্রতিমায়। মডার্ন কবিদের জীবনে আনকোডেড সংকেত নথিবদ্ধ করার সুযোগ বেশি ছিল এবং সঙ্কেতগুলো ছিল দ্রুতিমুক্ত। ভাষার মধ্যে তাকে খেলাবার জন্যে তিনি নিজেকে প্রশ্রয় দিতেন। পোস্টমডার্ন কবির মস্তিষ্ক এই আনকোডেড সংকেতে এতো উপচে পড়ে যে, স্লাইডের পর স্লাইড জমতে থাকে। মডার্ন কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের রচনার সঙ্গে পোস্টমডার্ন কবি উৎপলকুমার বসুর পাঠকৃতি তুলনা করলেই টের পাওয়া যাবে ব্যাপারটা।
কোডেড বার্তাগুলো তাদের অর্থবোধকতার জন্যে সামাজিক রীতিনীতি ও আচার-রেওয়াজের ওপর নির্ভরশীল। ভাষা, তা সে অক্ষরনির্মিত হোক বা ইশারানির্মিত, ঢোলক-তবলার তাল হোক বা কথ্থক-কুচিপুড়ির আঙ্গিক, সাজানো ফুলদানি হোক বা ক্রচেটের নকশা, ভোটারকার্ড হোক বা পেরামবুলেটার, এগুলো মানুষের বানানো কোড। সমাজ যেমন-যেমন ছড়িয়েছে, তেমন-তেমন বেড়েছে কোডের সংখ্যা, আকৃতি, প্রকৃতি, চরিত্র, বৈশিষ্ট্য, গুণাগুণ, ক্ষমতা। এতো বেশি সংখ্যায় আসছে কোডগুলো যে অনেকসময় তা ভাসিয়ে দিচ্ছে অভিব্যক্তির কুলকিনারা। আনকোডেড বার্তার তুলনায় কোডেড বার্তা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। মডার্ন কবিরা ছিলেন সমানুপাতক ভারসাম্যে। তাঁদের কাছে কোডেড বার্তাপ্রণালী ছিল সরল, অসম্পাদিত, অসংগঠিত, অনুক্রমমান্য। বস্তুত একশো চ্যানেলের টিভি, দশটা বাংলা সংবাদপত্র, প্রতিটি আগ্রহের খোরাক মেটাতে ভিন্ন ভিন্ন গ্লসি পত্রিকা, শয়েশয়ে লিটল ম্যাগাজিন, অগুন্তি নাট্যগোষ্ঠী, মডার্নিটি, তার যুক্তিশৃঙ্খলা প্রয়োগ করে,  এই বার্তা বিস্ফোরণের চাপ সামলাবার কথা চিন্তা করতে পারতো না । পোস্টমডার্ন কবিকে নিজের মস্তিষ্কে নথিভূক্ত করতে হচ্ছে অমন হাজার-হাজার কোড। মানুষ কতোটা নিতে পারে তা বৈজ্ঞানিকদের এখনও জানা নেই। পোস্টমডার্ন কবিতাকে নিতে হচ্ছে। ফলত ভঙ্গুর হয়ে উঠছে পোস্টমডার্ন কবিতার চিত্রকল্প।

যুক্তিবাদীতার দরুন মডার্ন কবি জানতেন যে ক্রিখেট খেলা হয় কেবল শীতকালে। পোস্টমডার্ন কবি জানেন যে বিয়াল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও ক্রিখেট খেলা হয়; বা স্মিরনফ, ভোদকা সহযোগে একক কবিতা পাঠের আসর বসে। মডার্নিটিতে যিনি দীক্ষিত তিনি নিজের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও অভ্যাস দিয়ে যে কারাগার গড়েছেন তাতেই তিনি আটক। তিনি কবিতার মানে, শব্দের মানে, অভিব্যক্তির মানে, চিহ্নের মানে দাবি করেন। ফলত ভঙ্গুর চিত্রকল্পের মানে খুঁজতে বসে বিব্রত ও বিপর্যস্ত হন। মানেকে অতিক্রম করে যে ব্যাখ্যাহীন আহ্লাদ, যে গাণিতিক সমাধানের থ্রিল, ভাষাতিরিক্ত বিস্ময়, তার সঙ্গে তিনি পরিচিত নন। পোস্টমডার্ন কবিতার চিত্রকল্প, যা মডার্ন কবিতার চিত্রকল্প থেকে একেবারেই আলাদা, তাকে বলা হচ্ছে দি কাইনেটিক ইমেজতার কারণ মডার্ন কালখন্ডটির তুলনায় আমাদের উত্তরঔপনিবেশিক কালখন্ডে সমগ্র জ্ঞানজগতে চলছে ভয়ঙ্কর উথালপাথাল। যে-প্রতিবর্তিক্রিয়া ও সংকেত-ভাঁড়ারের সাহায্যে কবি চিন্তা করেন, তাতে এক-একটি তথ্য বেশিদিন ধরে রাখা আর সম্ভব নয়।
ব্যক্তিমানুষ মাত্রেই নিজের মস্তিষ্কে বহির্বাস্তবের একটি মডেল বানিয়ে রাখে। মডেলটিতে থাকে হাজার-হাজার প্রতিমা। এগুলো আকাশে ভাসমান মেঘের মতো সরল হতে পারে। অথবা বিমূর্ত হতে পারে সামাজিক ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কিত । এই সমস্ত-কিছু জড়ো করা থাকে কবির মস্তিষ্কে, প্রতিমার এমপোরিয়ামে। মডার্ন কবিদের এমপোরিয়ামে তা থাকতো বিভাগ অনুযায়ী সাজানো। পোস্টমডার্ন কবির এমপোরিয়ামে দেখা দিয়েছে স্হানাভাব। তা গাদাগাদা প্রতিমায় ঠাসা।
বাস্তবের কাছাকাছি প্রতিমায় গড়া থাকে প্রতিটি ব্যক্তিমানুষের মডেল। আবার কিছু-কিছু প্রতিমা হল বিকৃত বা অযথাযথ। কিন্তু মানবসমাজে বাস করতে গেলে মোটামুটিভাবে বাস্তবজগতের সঙ্গে মিল থাকা দরকার। মোটামুটি একটা মিল সবায়েরই থাকে বলে সমাজটি মসৃণভাবে সক্রিয়। মডার্ন কবিরা, তাঁদের খন্ডবাদী ধারণার কারণে বিশ্বাস করতেন যে মিলটি হুবহু । অর্থাৎ একজনের সঙ্গে আরেকজনের পার্থক্য নেই। অর্থাৎ চিত্রকল্পকে ডেসিফার করলে সর্বজনীন ও সর্বমান্য মানে বেরিয়ে আসবে। পোস্টমডার্ন কবি মনে করেন তা অসম্ভব। আরো অসম্ভব এই জন্যে যে তা ভাষার আদরায় ধরা থাকে। এমন তো আর হয় না যে মৈত্রেয়ী চট্টোপাধ্যায় তাঁর নারীবাদকে জীবনানন্দ পড়ার সময়ে মুলতুবি রাখবেন।
বাস্তবজগতের মডেলে মানুষ থেকে মানুষে হুবহু মিল না থাকলেও, মডেলটি কারোর ব্যক্তিগত অবদানের ফসল নয়। প্রতিমাগুলোর কিয়দংশ সরাসরি পর্যবেক্ষণে সংগ্রহ করা হলেও, আজকের দিনে অধিকাংশ আসে তার দিকে তাক-করা গণমাধ্যম থেকে এবং চারিপাশের লোকজনের কাছ থেকে, যারা নিজেরা গণমাধ্যমে চোবানো। মডেলটির সঠিকতার শতাংশ দ্বারা একটি সমাজের জ্ঞানের বহর টের পাওয়া যায়। অভিজ্ঞতা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা যতো বাড়ছে, ততো সঠিক ও পরিশীলিত জ্ঞান তীব্রবেগে ঢুকে পড়ছে সমাজে। নতুন ধারণা, চিন্তার নবনব অবয়ব, পুরানো তত্ববিশ্বকে করে ফেলছে অকেজো, ফালতু, অপ্রচলিত ও সেকেলে। মডার্ন কবির অমন ক্ষণকালীনতার ঝামেলা ছিল না। মডার্ন কবি তাঁর চিত্রকল্পকে ঘষেমেজে নিটোল, প্রতীকি, একক, সমগ্র, ব্যাখ্যাযোগ্য করে ফেলতে পারতেন।
পোস্টমডার্ন কবির কাছে প্রতিমাগুলো তীব্রবেগে আসছে আর বেরিয়ে যাচ্ছে। সেহেতু প্রথম পংক্তির প্রতিমার বাকি টুকরোগুলো দ্বিতীয়, তৃতীয় পংক্তিতে পাওয়া যায় না। পরিবর্তে দেখা মেলে অন্য প্রতিমার টুকরোদের। অমন বেশ-কিছু টুকরোয় গড়ে ওঠে পোস্টমডার্ন চিত্রকল্প। বাংলা সাহিত্যে জীবনানন্দ দাশের বেলা অবেল কালবেলাকাব্যগ্রন্হে ভঙ্গুর চিত্রকল্পের সূত্রপাত ঘটেছিল। নয়ের দশকের কবিদের রচনায়, কম বয়সেই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার চাপে, তা হয়ে উঠছে অনিবার্য। যাঁরা গ্যালেলিও ও রবীন্দ্রনাথ কিংবা নিউটন ও সুধীন্দ্রনাথে অভ্যস্ত, তাঁদের পক্ষে এই দ্রুত ধাবমান আলোকণা ও শব্দতরঙ্গে গড়া পোস্টমডার্ন চিত্রকল্প থেকে চাগিয়ে-ওঠা আহ্লাদ টের পাওয়া কঠিন।
সমাজ যদি প্রায় স্হির থাকতো, যেমন ছিল প্রাগাধুনিক কালখন্ডে, অথবা হতো মন্হরগতি, যেমন ছিল আধুনিকতার কালখন্ডে, তাহলে প্রতিমা সরবরাহ প্রণালীতে চাপ পড়তো না তেমন, আর কবির ঘন-ঘন প্রয়োজন হতো না নিজের প্রতিমা-ভাঁড়ারের স্টক-টেকিঙে। প্রতিমাগুলো সমাজে তাঁর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। সমাজের সঙ্গে চলতে হলে সমাজে জ্ঞানের স্তরটা তাঁকে খেয়াল রাখতে হয়। যে-হারে সমাজে জ্ঞানের বিকাশ ও অনুপ্রবেশ ঘটছে, সেই হারে নিজের মস্তিষ্কে জমানো প্রতিমাগুলোকে রাখতে হয় আপ-টু-ডেট। পুরানোগুলোকে মুছে ফেলতে হয়। মডার্ন কবি জ্ঞান-সমুদ্রের কথা বলতেন। পোস্টমডার্ন কবি জানেন না যে জ্ঞানের কতো সহস্র নীহারিকাপূঞ্জ ছড়িয়ে আছে মহাশূন্যে। সমুদ্রের সীমা হয়, এবং উপলখন্ড কুড়ানো যায় তার তীরে। মহাশূন্যের সীমানা নেই এবং তা থেকে খন্ডজ্ঞান সম্ভব নয়।
মডার্ন কালখন্ডে মন্হর বৈজ্ঞানিক গবেষণার কারণে সত্য নিয়ে টানাটানির সম্ভাবনা ছিল কম। পোস্টমডার্ন কালখন্ডে সে-সমস্ত বহু সত্য ভুল প্রমাণিত হচ্ছে, হয়ে চলেছে; দ্বিতীয়ত, প্রতিনিয়ত নতুন আবিষ্কার দ্বিতীয়টাকে প্রমাণ করে দিচ্ছে অসম্পূর্ণ, যার দরুণ একটিমাত্র সত্যের তত্বটি তারই বহুবিধ রূপ দ্বারা আক্রান্ত। মডার্ন কবি দিব্বি সরষের তেলে রান্না খেয়েছেন আর নিশ্চিন্তে কবিতে লিখেছেন। পোস্টমডার্ন কবিকে এক ডাক্তার বলছেন সরষের তেলে রাঁধা খেলে হৃদযন্ত্রের ব্যারাম হয়; আরেকজন বলছেন যে তেলটাকে বেশি গরম করলেই তা ক্ষতিকারক হয় নতুবা নয়আরেকজন বলছেন যে, না-না, কোনো ক্ষতি হয় না সরষের তেল খেলে; আবার আরকজন বলছেন যে পেসমেকার বসিয়ে নিলে খাবার আনন্দটা বজায় রাখা যায়। মডার্ন কবি বুদ্ধদেব বসুকে যে জ্ঞান-ঝঞ্ঝার মোকাবিলা করতে হয়নি তা পোস্টমডার্ন কবি বারীন ঘোষালকে করতে হচ্ছে। মডার্ন মহিলা কবিরা প্রেমের কবিতা লেখার সময়ে নাইট-আফটার পিল-এর কথা জানতেন না; পোস্টমডার্ন মহিলা কবিরা নাইট-আফটার পিলের কথা জানেন, এবং সেকারণে কারোর-কারোর একাধিক প্রেমিক থাকার সুযোগ ঘটে গেছে। মডার্ন চিত্রকল্প, সেকারণে, একটিমাত্র ভাবভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারে। পোস্টমডার্ন চিত্রকল্পের ক্ষেত্রে, ভাবভিত্তির সংখ্যাধিক্যের কারণে, অমন স্হিরতা সম্ভব নয়।
বাজার এবং গণমাধ্যমের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পোস্টমডার্ন ব্যক্তিমানুষের দিকে তাক করে যে বার্তাগুলো অবিরাম ছোঁড়া হচ্ছে তা বিশেষজ্ঞের দ্বারা বিশেষ উদ্দেশ্যে বানানো। অর্ধাৎ তা অব্যর্থ উদ্দেশ্যপূর্ণ, এবং বাজার-কেন্দ্রিক। তা, যাকে বলা হয় প্রিইনজিনিয়ার্ড, ঠিক তাই। তাতে যে-ধরণের সংলাপ থাকে, বাক্য থাকে, ইশারা থাকে, তা একেবারে ঠাসবুনোট, পুনরক্তিবর্জিত, মাপজোক-করা, সুসম্পাদিত, প্রত্যাশিত-প্রতিক্রিয়া আদায়কারী, চাঁছাছোলা। প্রতিনিয়ত নতুন দ্রুতি নিয়ে ওই সমস্ত অজস্র অব্যর্থ বার্তা, প্রয়োজনীয় হোক বা অপ্রয়োজনীয়, আছড়ে পড়তে থাকে কবির অস্তিত্বে। কবির চিত্রকল্পের উপাদানগুলো তাড়া খেতে থাকে এবং পোস্টমডার্ন চিত্রকল্পের ইমপ্লোজান’ –implosion — ঘটায়।




No comments:

Post a Comment