Thursday 29 June 2017

কবিতা

জগন্নাথদেব মন্ডল



জন্মান্তর

১.
আমার পুরুষদেহ ভাসিয়েছিলাম নদীজলে
শকুন্তলার আংটি গেলা মাছ আমার পুরুষাঙ্গ খুবলে খেয়েছিল
গাঙ-শরীরে পূর্বজন্মের মতো আবছা ভোর
কুয়াশার বুকে আমার অর্ধনারীশ্বর জন্ম হয়েছে
আমার পাতলা নাভিগুহায় চাঁদের ঝিলিক
জ্যোৎস্নায় ঠোঁট রেখেছ তুমি
আমরা পরস্পরকে মান্দাস করে সঙ্গম করেছি
তুমি আমার ভয় ছুঁয়েছ
আমি তোমার দুঃখ চেটেছি
সাঁতরে পার করেছি অনন্ত শীতল জল
এখনো আমার দেহে তোমার শরীরের আঁশগন্ধ আছে
তোমার শরীরে জলের সোঁদাঘ্রান লেগে


২.
এই জন্মে পিঠে বিষাক্ত তির নিয়ে ছুটে গেছি তোমার কাছে
বালিয়াড়ী,ঝাউবন,মধুচন্দ্রিমা পেরিয়ে পেরিয়ে
হোটেলরুমে নুলিয়াপাড়ার গন্ধ এসেছে
তুমি আমাকে নগ্ন করে আদরজিভে শুষে নিয়েছ সবটুকু কান্না- ক্লেদ,থকথকে অভিমান
তুমি আমার গতজন্ম স্মৃতি
তুমি আমার জামা উল্টে ক্ষতস্থান দ্যাখো
আমি তোমার জন্মদাগ খুঁজি
আবার আমরা মিলিত হব খাজুরাহো কিংবা রাত্রিকালীন সূর্যমন্দির চাতালে
শনশন হাওয়া ওঠে
সৈকতে চিকচিক হলদে রঙ বালি
এই জন্ম আমরা আবার মরে যাই
পরজন্মের অপেক্ষায়
একা চাঁদ জেগে থাকে
শুধু জেগে থাকে


জন্মমাস


মাঘ মাসের শেষরাতে আমি জন্মেছিলাম
জন্মমুহূর্তে সারা হাসাপাতাল ঢেকে গেছিল কুয়াশার ঘেরাটোপে
জানালার ওপারে চা দোকান আর চিকন পাতার দেবদারু গাছের সারি
বাতাসে নার্সদের চলাফেরার শব্দ
এর কয়েকঘন্টা পরে আমার মা খাবি খেতে খেতে মরে গেছিল
যেভাবে পুরনো রসুইঘরে মা কুকুর মরে যায়
আমার জন্মদিন,মায়ের মৃত্যুদিন এক দিনে
তাই আমার জন্মদিন পালন হয় না
সেই পৌষের হিমবেলায় ডেডবডির পাশে শুয়ে বেঁচে থাকার গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে বাড়ি ফিরেছিলাম
কেষ্টকাকার ট্রলিভ্যানে বাতাস থমকে যাচ্ছিল
আমাদের কলোনীর দোরগোড়া অবধি একটা কালো বেড়াল কাঁদতে কাঁদতে আসছিল
উলু নেই,আলো নেই,হাসি নেই,নেই রোশনাই
শুধু কান্নার রোল
প্রতি জন্মমাসেএখনো আমি বেড়ালটাকে দেখতে পাই
আমার জন্মমুহূর্তের কথা মনে পড়ে
কান্নাশব্দ..
মায়ের ডেডবডি...










No comments:

Post a Comment